ঘুষ-বাণিজ্য, ঘুষ গ্রহণের ভিডিও এবং এসব নিয়ে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে গেছে সানোয়ার হোসেনের চেয়ার। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজিপুর ইউনিয়নের এই উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নিজ এলাকার ভূমি-অফিসে বছরের পর বছর ধরে ঘুষ-দুর্নীতির পসরা সাজিয়ে বসা এ কর্মকর্তাকে এবার নিজের আরামের জায়গা ছেড়ে যেতে হচ্ছে গফরগাঁওয়ে।
সেইসঙ্গে সাজামূলক বদলির কোপ পড়েছে সানোয়ার হোসেনের ঘুষ-বাণিজ্যের প্রধান সঙ্গীর ওপর। তাকেও ছাড়তে হচ্ছে রাজিপুর ভূমি অফিস। ভিডিওতে ঘুষের টাকা লেনদেন করতে দেখা অফিস সহকারী আহম্মদ আলীকে বদলি করা হয়েছে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান সোমবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজিপুর ভূমি অফিসের ঘুষ-দুর্নীতি অনুসন্ধান করে শনিবার (২৫ নভেম্বর) খবর প্রকাশ করে নিউজবাংলা। ‘সরকারি খরচে পোষায় না ভূমি কর্মকর্তার’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে রাজিপুর ভূমি অফিস সহকারী আহম্মদ আলী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে অফিসের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করা হিরনের মাধ্যমে ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারের ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরা হয়।
সম্প্রতি ওই ভূমি কর্মকর্তার পক্ষে অফিস সহকারী আলী আহম্মদের ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও’ও সংগ্রহ করে নিউজবাংলা। এরপর স্থানীয়, সেবাগ্রহীতা, ভূমি প্রশাসনের বিভিন্নজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর অভিযোগের তদন্ত ও ভিডিওতে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সেইসঙ্গে আরও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের জন্য করা হয়েছে আবেদন।
এ ঘটনার পর ভূমি অফিসের সেবাগ্রহীতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
নিজের জমি খারিজ করতে গিয়ে ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারকে ১৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হওয়া মাহফুজ আহম্মদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারসহ অফিস সহকারী আহম্মদ বদলি হয়েছেন জেনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে ক্ষোভও ঝরল তার কণ্ঠে, ‘এরা ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না। শুধুমাত্র বদলি করে এদেরকে ভালো করা যাবে না। চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করলে অন্য দুর্নীতিবাজ কমকর্তারা ভয় পেয়ে নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যেত।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রোববার রাতে ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ারকে গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এবং আহম্মদ আলীকে হালুয়াঘাট ইউএনও-র কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।’
তবে শাস্তিমূলক বদলির খাঁড়ায় পড়ার পরও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই ঘুষ নেইনি। ওইদিন আহম্মদ যেই টাকা নিয়েছে, সেগুলো আমি ছুঁয়েও দেখিনি। তবুও আমাকে বদলি করা হয়েছে।’