আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, জয়া সেনগুপ্ত, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, ডা. মুরাদ হাসান, সাদেক খান, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তার জামাতা হাবিবে মিল্লাত, সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদসহ অনেকে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সদ্য সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন। এবার এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিপ্লব হাসান। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান খুলনা তিন আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার আসনে এবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মনোনয়ন পেয়েছেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের ময়মনসিংহ-৫ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল হাই আকন্দ। চট্টগ্রাম-৩ আসনে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন মোতাহেরুল ইসলাম।
মহিউদ্দিন খান আলমগীর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছিলেন প্রভাবশালী আমলা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এবার তার (চাঁদপুর-১) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ। সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের আসনে (জামালপুর-১) এবার মনোনয়ন পেয়েছেন নূর আহমেদ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ ছিলেন বরিশাল-৪ আসনের এমপি। এবার তার জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। মনোননয়ন তালিকায় ক্রিকেটারদের একজন যোগ হলেও বাদ পড়েছেন আরেকজন। তিনি নাঈমুর রহমান দুর্জয়। মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্যের জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুস সালাম।
এবার মনোনয়ন পাননি শ্বশুর ও জামাতা উভয়ই। তারা হলেন সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার জামাতা সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত। তাদের স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সিরাজগঞ্জে ব্যাংক লুটের জন্য সমালোচিত জান্নাত আরা হেনরী।
ঢাকা-১৩ আসনে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি সাদেক খান। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বহুল আলোচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ছিলেন জামালপুর-৪-এর সংসদ সদস্য। এখানে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন মাহবুবুর রহমান। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের আসনে (কিশোগঞ্জ-২) দলের টিকেট বাগিয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৪ থেকে বাদ পড়েছেন তানভীর ইমাম। তিনি প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে। রাজশাহী-৩ আসন থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা আয়েন উদ্দিন। বরগুনা-২ থেকে বাদ পড়েছেন শওকত হাচানুর রিমন। তার আসনে এসেছেন সুলতানা নাদিরা। বরিশাল-২ আসনে শাহে আলমের পরিবর্তে পেয়েছেন তালুকদার ইউনূস।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মানু মজুমদার এবার দলের মনোনয়ন পাননি। তার স্থলে নেত্রকোনা-১ আসনে এবার ফিরেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রূহী। নেত্রকোনা-৫-এ মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। সেখানে বাদ পড়েছেন ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।
ঢাকা-১০ আসনে ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সিলেট-৩ আসন থেকে বাদ পড়েছেন প্রয়াত পররষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবার দলের মনোনয়ন চাননি। তার জায়গায় ছেলে মাহবুবুর রহমানকে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সে ধারাবাহিকতাায় তার ছেলেই মনোনয়ন পেয়েছেন।
একই ঘটনা ঘটেছে রংপুর-৫ আসনের ক্ষেত্রে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান। আশিকুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ। তিনি মনোনয়নপত্র না কিনে তার ছেলের জন্য কেনেন এবং দলকে অনুরোধ করেন ছেলেকে মনোনয়ন দেয়ার।