বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্য হাতির আক্রমণে নিহতের পরিবার পাবে ৩ লাখ টাকা

  • প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম   
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ২১:৪৩

এ ছাড়া হাতির আক্রমণে আহত হলে এক লাখ টাকা এবং ফসল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে বন বিভাগ।

বন্য হাতির আক্রমণে কেউ নিহত হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবার পাবে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া আহত হয়ে কেউ বেঁচে গেলে ১ লাখ টাকা এবং ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বন বিভাগ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের কার্যালয় জানিয়েছে, একইভাবে খেত, ঘরবাড়ি কিংবা অন্য সহায়-সম্পদের ক্ষতিসাধন করলেও বন বিভাগ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেবে। তবুও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হাতি তাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।

যদিও চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় গত ১০ বছরে বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জনেরও বেশি। হাতির আক্রমণে লোকালয়ে একের পর এক মানুষের প্রাণহানি হলেও অতীতে বন বিভাগ কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

চট্টগ্রাম বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গল ও পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলায় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে পাগলপ্রায় বন্য হাতি। ফলে কিছুদিন পরপর চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার লোকালয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে তাদের। তাদের আক্রমণে আহত-নিহত ও বসতবাড়ি ভাঙচুর নিত্যদিনের ঘটনা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান, দোলতপুর, দক্ষিণ শাহমীরপুর এবং আনোয়ারার গুয়াপঞ্চক, বৈরাগ, মোহাম্মদপুর, ফকিরখিল, বটতলী, হাজিগাঁও, গুচ্ছগ্রামে বিগত বছরগুলোতে তিন শতাধিক পরিবারের বসতঘর ভাঙচুর ও হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটেছে।

এদের মধ্যে বড়উঠান খিলপাড়া গ্রামের ৭২ বছর বয়সী জালাল আহমদ, ২০১২ সালে মরিয়ম আশ্রম এলাকার জুয়েল দাশ, একই বছরের ১৩ জুলাই আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আবদুর রহমান, ২৬ জুন পুরাতন গুচ্ছগ্রামের ৬৫ বছর বয়সী মোমেনা খাতুন, ১৪ জুলাই বৈরাগ ইউনিয়নের ৫০ বছর বয়সী মো. আকতার হোসেন চৌধুরী, ১৭ আগস্ট তৈলারদ্বীপ এলাকার ৬৮ বছর বয়সী মো. আবদুল মোতালেব বাবুল ও বরুমছড়া গ্রামের এক মহিলা হাতির আক্রমণে নিহত হন। সর্বশেষ কর্ণফুলীতে বন্য হাতির তাণ্ডবে গার্মেন্টস শ্রমিক ২২ বছর বয়সী মো. এনাম ও ২০ বছর বয়সী সজিব গুরুত্বর আহত হন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত মারা গেছে মোট ৪৩টি হাতি। এর মধ্যে ১৬টি চট্টগ্রামে এবং বাকিগুলো বান্দরবান ও কক্সবাজারে। এসব হাতির মধ্যে ১৯টি অসুস্থতাজনিত কারণে, পাঁচটি বার্ধক্যজনিত এবং অন্যগুলোর মৃত্যু হয়েছে মানবসৃষ্ট কারণে।

এ ছাড়া পানিতে ডুবে কিংবা পাহাড় থেকে পড়েও বেশকিছু হাতি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত তিন বছরে মোট ৯টি হাতি মারা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি চট্টগ্রামে, একটি বান্দরবানের লামায় এবং বাকি চারটি হাতি হত্যা করা হয়েছে কক্সবাজারে।

আইইউসিএন-এর জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বন্য হাতির সংখ্যা ছিল ২৬৮টি। এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন ৮২টি, চিড়িয়াখানায় তিনটি ও দেশের দুটি সাফারি পার্কে ১১টি হাতি রয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কিছু হাতির প্রজননও হয়েছে বলে মনে করেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে হাতির করিডোর রক্ষায় হাইকোর্টে রিটও হয়েছে।

বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, “সারাদিন পরিশ্রম করে রান্নাঘরে ভাত খেতে বসলেই গ্রামবাসীর হাকডাক আসে ‘হাতি আসতেছে’। এই হাতির আক্রমণে একে একে নিহত হচ্ছে মানুষ। ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে হাতি। আমি বন বিভাগকে বারবার বলেছি বড়উঠানের গ্রামবাসীকে হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচাতে।”

কেইপিজেডের প্রশাসন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মঈনুল আহসান বলেন, ‘বন্য হাতি প্রায় সময় গাছপালা উপড়ে ফেলছে, স্থাপনা ভাঙছে। এখানকার ২৩টি কারখানায় কাজ করেন আনোয়ারা-কর্ণফুলী ও আশপাশের এলাকার প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরার জন্য বের হতেই তারা হাতি আতঙ্কে থাকেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এরপরও অনেকের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করলে বনবিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে সরকার তিন লাখ টাকা করে দিচ্ছে। আবার কেউ আহত হলে এক লাখ টাকা করে দেবে। একইভাবে খেত, ফসল, ঘরবাড়ি কিংবা অন্যকিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও দেয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণ।’

এ বিভাগের আরো খবর