রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিঃশর্ত সংলাপ চেয়ে দেশের তিন রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র দেয়া চিঠিকে শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ দাবি করে এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগের ৮২৫ জন শিক্ষক।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের নামে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এবার অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগ্রসরমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উন্নয়নের ধারাকে পশ্চাদ্গামী করার মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তির অপতৎপরতায় রসদ যোগাচ্ছে।
বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তির নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৮২৪ শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে জানানো হয়, তারা এই বিবৃতির পক্ষে আছেন। তবে প্রত্যেকেই এই বিবৃতি সম্পর্কে অবগত কি না সেটি খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সহিংসতা সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক দল ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় তারা উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সবাইকে আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত সকল ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে সেদেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে লেখা চিঠি বিতরণ করেছে। অথচ ইতোপূর্বে সরকারকে পদত্যাগের একদফা শর্ত জুড়ে দিয়ে বিএনপি-জামাতই শর্তহীন সংলাপের দাবিকে নাকচ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। একই ধারাবাহিকতায় তাদের নীতি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে রসদ যুগিয়ে চলেছে।
বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে জনসমর্থন না পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পক্ষপাতমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নি- সংযোগ, শিল্প-কলকারখানা ভাংচুর, পুলিশ ও সাধারণ পথচারী-হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাংচুর ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তথাকথিত মানবধিকার ও গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা রাষ্ট্রটি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি; নির্বাচনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থকারীদের ওপর ভিসানীতিও প্রয়োগ করেনি।
এতে বলা হয়, এ রাষ্ট্রটি কথায় কথায় মানবাধিকারের কথা বললেও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে নারী-শিশুসহ গণহত্যায় নগ্নভাবে ইজরাইলিদের পক্ষাবলম্বন করেছে। তারা গণতন্ত্রের নামে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
এ ছাড়া গত ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবধিকার হাইকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেসব্রিফিং-এর প্রতিবাদ জানিয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে দাবি করা হয়, এটি অসত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, হাইকমিশনের এ ধরনের পদক্ষেপ মানুষ হত্যা, ভাংচুর, সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে যারা তৎপর রয়েছে তাদেরকে উৎসাহিত করবে।