প্রতিদিন দুপুরে গ্যাস বেলুন ফুলিয়ে, বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীতে বিক্রি করতেন তরিকুল ইসলাম ও সালমা দম্পতি। ময়মনসিংহ শহরতলীর কালিবাড়ি দক্ষিণপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে এ কাজটি করতেন তারা। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হবে এমন আশংকায় বাড়ি ছাড়তে তাগাদা দিতেন বাড়ির মালিক ইদ্রিস আলী। যেই কথা সেই কাজ। অবশেষে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৭ শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কালিবাড়ি দক্ষিণপাড়া এলাকার টিনের দোচালা বাসায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেশ কয়েকটি টিন উড়ে যায়। বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয় আশপাশে বসবাস করা লোকজন। দৌড়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দগ্ধ হলো ৫ বছরের মীম, সোলেমান, ইয়াসিন ও ৭ বছর বয়সী রাহিম, ৯ বছর বয়সী মানিক, ৩০ বছর বয়সী তরিকুল, ৪৫ বছর বয়সী সোহেল, ৪০ বছর বয়সী কহিনুর, ইসমাইল ও সালমা। আরেকজনের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহতদের অনেকের শরীরের চামড়া পুড়ে গেছে। কারও চামড়া ক্ষয়ে গেছে। ব্যাথায় বিছানায় কাতরাচ্ছে তারা। তবে সবচেয়ে বেশী কান্নাকাটি করছে দগ্ধ ছোট্ট শিশুরা।
বিস্ফোরণ হওয়া ওই বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে টিনের বেড়া উড়ে গেছে। পাশের টিনের ঘরের বেড়াগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরিত হয়ে সিলিন্ডার টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে বাড়িতে ভীড় জমিয়েছেন।
এ সময় কথা হয় বাড়ির মালিক ইদ্রিস আলীর চাচী সমলা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইদ্রিস একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করে। তার টিনের বাসায় চার মাস যাবত তরিকুল ইসলাম ও সালমা দম্পতি প্রতিমাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ভাড়া থেকে গ্যাস বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি করতো। এতে সিলিন্ডার যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হবে এমন আতঙ্কে গত সপ্তাহে তরিকুলকে বাড়ি ছাড়তে বলে ইদ্রিস। এমতাবস্থায় আর এক মাস সময় চেয়ে নেন তরিকুল। এরমধ্যেই আজকে বিস্ফোরণ হয়।’
তিনি জানান, বিস্ফোরণের আগে পাশেই বেশ কয়েকজন শিশু একসঙ্গে খেলা করেছিল। পরে বিস্ফোরণে ওই শিশুসহ অন্যরা গুরুতর আহন হয়। শিশুরা চিৎকার করে দিকবেদিক ছুটোছুটি করতে থাকে।
মর্জিনা নামে একজন প্রতিবেশী বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে যাই। দৌড়ে এসে দেখি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ১১ জন আহত হয়েছেন। পরিবারের লোকজন কান্নাকাটি করছেন। যে যেইভাবে পেরেছে হাসপাতালের দিকে তাদের নিয়ে যাচ্ছে।’
আতহার আলী নামের আরেকজন স্থানীয় বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এমন এলাকায় বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করা অপরাধ। যারা এই কাজটি করেছেন সবাইকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিশুসহ আহতদের হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’