বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বুধবার রাজধানীতে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করলেও তা ছিল খুবই সীমিত। এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা। বাস না পেয়ে বিকল্প উপায়ে এবং অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী।
অবরোধ চলাকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেয়া হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ পাঁচটি গাড়িতে। এসব ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যসহ কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ১৫ জনকে।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার রাত ৭টা পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক মোট ২১টি আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে।
বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চারটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সন্ধ্যায় শ্যামলী এলাকায় ‘ওয়েলকাম পরিবহন’-এর একটি বাসে ও মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজের একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেয়া হয়।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজের সামনে মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে এবং বিকেলে মিরপুরের কাফরুল থানার সামনে তিতাস নামে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া উত্তরা এলাকায় একটি বাসে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তবে এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’
পুলিশ বলছে, গাড়িতে আগুন দিয়ে পালানোর সময় দুজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সৃষ্টির অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রথমে কাকরাইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এতে শতাধিক পুলিশ ও সাংবাদিক ছাড়াও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
পরদিন রোববার বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। এরপর মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকালে মাতুয়াইলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হন পুলিশের তিন সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এছাড়া মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র বলছে, অবরোধ চলাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কম-বেশি আহত হয়েছেন।
অবরোধ চলাকালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন, বনানী, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও মিরপুর এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতা ঠেকাতে সোমবার গভীর রাত থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সাদা পোশাকেও কাজ করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সড়কে ঝটিকা মিছিল
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বুধবারও বিএনপির নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করে। এদিনও ঢাকায় যানবাহন চলাচল ছিল কম। সাধারণ মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হননি। দূরপাল্লার বাসও চলেছে কম।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং গণঅধিকার পরিষদও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াতে ইসলামী আলাদাভাবে এই তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। অবরোধে সমর্থন দিয়েছে এবি পার্টি। দলগুলো অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে।
রাজধানীর রামপুরা, উত্তরায়, বনশ্রী, মেরাদিয়া বাজার ও পল্টনে বিএনপি, ছাত্রদল ও সমমনা দলগুলো ঝটিকা মিছিল বের করে।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল বলেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার রাত ৭টা পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক মোট ২১টি আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে।
ঢাকা সিটিতে ৫টি ছাড়াও ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ) ৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলি ও রাঙ্গুনিয়া) ৪টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া, রায়গঞ্জ) ৪টি, রংপুর বিভাগে (পার্বতীপুর) একটি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় ১০টি বাস, ৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৩টি ট্রাক, ১টি পিকআপ, ১টি মোটরসাইকেল, বাণিজ্যিক পণ্যের দুটি শো-রুম ও একটি পুলিশ বক্স পুড়ে যায়।