আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বারবার সতর্ক-নিষেধ করা হলেও নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর দলটি। ওইদিন নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
এ বিষয়ে রিজভী বলেছেন, ‘শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এটাই উপযুক্ত জায়গা। এখানে আমরা একাধিকবার শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। এই মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক। ওই দিন সারা দেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েছে।
‘যদিও সরকারের জুলুম-নির্যাতন, দমন-পীড়নের কোনো কমতি নেই। অব্যাহত গণগ্রেপ্তারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে।’
বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
এ সময় মহাসমাবেশ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন- যেখানেই অনুমতি দেয়া হবে সেখানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এ রকমের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের জনগণ এখন পরাধীন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড, মতপ্রকাশ ইত্যাদি সবকিছুই এখন পুলিশের ছাড়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ সকল বিরোধী দলগুলোর প্রতি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের ক্রোধ একই রকমভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তারা মনে করে, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সব সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
‘পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্ষরিক অর্থেই শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। অবৈধ সরকারের মন্ত্রীদের সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকির মাত্রা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’
তিনি বলেন, “আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতাদের দ্বারা হত্যার হুমকি, নির্মূলের হুমকি, হেফাজতকে দমনের মতো হুমকির পর এবার বিএনপির সমাবেশ নিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে এক উপসংহারহীন পরিণতি সৃষ্টিরই ইঙ্গিত করা হচ্ছে। বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছে যে, আইন-আদালতের ভবন আছে, কিন্তু বাস্তবে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘শেখ হাসিনাই হলো আইন’।”
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা তো মালিক নন। একটি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ কোথায় হবে, তা তারা কীভাবে নির্ধারণ করে দেয়? বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, যাদের কয়েকবার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দলটি কি জানে না যে, সমাবেশ কোথায় করতে হয়? পুলিশ কর্মকর্তাদের এহেন বক্তব্য রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা দান ও সরাসরি হস্তক্ষেপ।’
রিজভী বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকা মহানগরকে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের জায়গা বানাতে চাচ্ছে সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে র্যাবের চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে নানাভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়িসহ তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী বাহিনী তল্লাশির নামে গ্রেপ্তার ও নানা কায়দায় নাজেহাল করছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সরকার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্যই নানা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়েও অস্বীকার করা, গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা এবং হামলা ও রক্ত ঝরানোর কাজের পাশাপাশি রুটিনমাফিক মিথ্যাচার অব্যাহত রেখেছে।’
‘তবে বলপ্রয়োগ ও ভয় উৎপাদন করে মানুষের জনস্রোতকে আটকিয়ে রাখা যাবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিগন্তরেখায় গণতন্ত্রের মুক্তি-সূর্য উঠতে শুরু করেছে। গ্রাম-গঞ্জ-শহর, বাজার-বন্দর সবখানেই এখন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। জনগণ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। চলমান গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাই জনগণের বিজয় হবেই। মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচিসমূহ সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
এসময় তিনি সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলার বিবরণ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।