বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটের রাজনীতিতে পাল্টে গেছে প্রধান দু’দলের মিত্র

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ২৩:৪৯

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ চলছে। ইতোমধ্যে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পুরনো মিত্রদের অনেকে এই তাদের অবস্থান বদলেছে। ভোটের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আদর্শগত মিল না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’- বহুল প্রচলিত একটি বাক্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই শব্দবন্ধের উপযোগিতা মূলত বিশেষ একটি জায়গায়। তা হলো- ভোটের রাজনীতি। বিশেষত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তা ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে আসছে।

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ চলছে। ইতোমধ্যে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পুরনো মিত্রদের অনেকে এই তাদের অবস্থান বদলেছে। ভোটের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আদর্শগত মিল না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

তবে এখানেই শেষ- এমনটা বলা মুশকিল। কেননা কারণ জাতীয় নির্বাচনের আরও মাস দুয়েকের মতো বাকি। ভোটের আগ মুহূর্তে এসে পক্ষত্যাগী দলগুলোর অবস্থান আবারও পাল্টানোটা বিচিত্র নয়।

বর্তমানের বাস্তবতা হলো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক সময় জোটে থাকা, সমঝোতায় থাকা রাজনৈতিক দল ও নেতারা এখন বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মিত্ররা ভিড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বলয়ে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট গঠন হয় ২০০৪ সালে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণফোরাম ছিল এই জোটের শরিক দল।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ওই দলগুলো জোট ছেড়ে চলে যায়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে জোটটি। ক্ষমতার বলয়ে থাকা অবস্থায় ভাঙনের মুখে পড়ে জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল ও জাতীয় পার্টি।

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে সিপিবি-বাসদ। এসব কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের অন্যতম নেতা ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন। বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বদলে বিএনপি বা অন্যদের বসানো আমাদের লক্ষ্য নয়।

‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

আদর্শগত মিল না থাকায় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে বাম জোটে নেই বলে জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আদর্শিক অবস্থান থেকে বাম জোট আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় ধারার বাইরে একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করতে চাইছে।’

সিপিবি ও বাসদ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামেরও।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের প্রধান শরিক দল ছিল বিএনপি।

নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গণফোরাম ভেঙে যায়। দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী আলাদা গণফোরাম তৈরি করেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হন মিজানুর রহমান।

জাতির জন্য গণতন্ত্রহীনতা বড় সংকট- চলতি বছরের ২৯ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা উল্লেখ করে ৱএই সংকট থেকে উত্তরণে ৬ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন। সে সঙ্গে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সংলাপের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই প্রবীণ রাজনীতিক।

অন্যদিকে জাসদ ভেঙে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান গঠন করেন বাংলাদেশ জাসদ। দলটি চলতি বছরে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। বাংলাদেশ জাসদ বর্তমানে ৮ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। মূলত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ১৪ দলীয় জোট ত্যাগ করে বাংলাদেশ জাসদ।

দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন চাই আমরা। বর্তমান সরকার যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছে সেই নির্বাচনে অংশ নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এখন আমরা কোনো জোটে নেই।’

ভবিষ্যতের রাজনীতি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ওই বছরই গঠন করেন ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল। দলটি ২০০৮ সালে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও গণফোরামের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় যুক্তফ্রন্ট। পরে গণফোরাম বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলে বিকল্প ধারা ওই জোটে যোগ দেয়নি। বিকল্প ধারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুটি আসনে জয়লাভ করে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

‘আমরা মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবাই মিলে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। আশা করি বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেব।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শমসের মুবিন চৌধুরী দলটির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এর আগে দলটির কূটনৈতিক তৎপরতায় কাজ করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি নেন শমসের মুবিন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগে যোগ দন বিকল্পধারা বাংলাদেশে। বর্তমানে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নিয়েছেন এই সাবেক কূটনীতিক ও রাজনীতিক।

আর ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার হাতে গড়া দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা তৈমুর আলম খন্দকার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। আমরা নির্বাচন করতে চাই। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে আশা করছি আমরা।’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) গঠন হয় ২০০৭ সালে। শেখ শওকত হোসেন নিলু এই দল গঠন করেন এবং এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দলটি ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ১০ হাজার ৩৪৮ ভোট পায় দলটি।

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয় এনপিপি। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জোটের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয় নিলুর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করেন তিনি। ২০১৭ সালে ৬ মে মারা যান নিলু। পরবর্তীতে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন তার ভাই শেখ ছালাউদ্দিন ছালু। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি এনপিপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

এনপিপি ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, ‘গণতন্ত্রের বিকাশ, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই হানাহানি বাদ দিয়ে সংলাপের মাধ্যমে হোক বা সমঝোতার মাধ্যমে হোক একটা সুষ্ঠু ধারা দেশে ফিরিয়ে আনতে। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে।’

তিনি অভিযোগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেতনা বিএনপিই ধ্বংস করে দিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর