বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ প্রয়োজন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে নির্বাচন কী- সেটা আমরা জানি। সেই নির্বাচনে ভোটারের দরকার নেই, দেশের জনগণের দরকার নেই, বিরোধীদলেরও দরকার নেই।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী চিত্রকর্মশালা ও কবিতা পাঠ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান আর্কাইভ নামে একটি সংগঠন।
রিজভী বলেন, ‘এ রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নেই। শেখ হাসিনা এ রাষ্ট্রকে অধঃপতিত করেছেন, তার ভয়ঙ্কর অত্যাচারিত শাসনের মধ্য দিয়ে। তিনি এখন কী করতে চান? তিনি কি ২০১৪ ও ১৮ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করবেন? তিনি জনগণের দাবিকে, শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র ও দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে দিতে চান না। তিনি তার মন্ত্রীদের দিয়ে বলাচ্ছেন, পৃথিবীর সব দেশ ঠিক হয়ে গেছে। ঠিক হয়ে গেছে মানে আপনার অধীনে নির্বাচন? আর আপনার অধীনে নির্বাচন মানে ২০১৪-১৮ নির্বাচনের মতো। ২০১৪ নির্বাচনে ১৫৩টিতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। বাকিগুলোতে উপস্থিত ছিল ৫ শতাংশ। আর ২০১৮ নির্বাচন করেছেন রাতে। ভোর হওয়ার আগেই ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘জনগণের কথা, আন্তর্জাতিক শক্তির কথা কারও কথাই ঠিক না, আপনার কথাই ঠিক? কীসের জন্য? কীসের জন্য এটা তো আমরা বুঝি। পৃথিবীর প্রতিটি স্বৈরশাসক তাই করে। সব সময় তাই করেছে। ফ্লাইওভার, উড়াল সেতু, হাইওয়ে করেছে যাতে চোখে পড়ে, অথচ সেই দেশের মানুষ একটা ডিম কিনতে পারে না। মানুষের যে হাহাকার-অনাহার এগুলো তাদের চোখে পড়ে না।’
নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। আগে তো নিম্নবিত্ত মানুষ কিনতে পারত না, এখন সেটা মধ্যবিত্ত পর্যন্ত চলে এসেছে। তারা পারছে না কারো কাছে হাত পাততে, পারছে না ভিক্ষা করতে। তাদের যে আয়, সে আয় দিয়ে কোনো কিছু কিনে খেতে পারছে না।
‘একটি ডিম কিনতে যদি ১৭ টাকা লাগে, তাহলে ফ্লাইওভার দেখিয়ে আপনি কী করবেন? পৃথিবীর সমস্ত ফ্যাসিস্টরাই এই ধরনের কাজ করেছে।’
২০১৮ সালের নির্বাচনের একটি ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফরিদপুরের নগরকান্দায় আওয়ামী লীগের লোকেরা মাইকিং করে হুমকি দিয়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যে, আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। তারা নৌকায়ও ভোট চাচ্ছে না। বিরোধী দলকে হুমকি দিচ্ছে যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়। কোনো নির্বাচনে প্রার্থী বা বিরোধী প্রার্থী থাকলে সেই প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং করে বা পোস্টার ছাপায়, কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন সেই নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছে না। তারা ভোটারদের এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে। তার কারণ শেখ হাসিনা কোনো ভোট চান না।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার নেতা-কর্মীরা বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। আপনারা কি সংবিধানের বাইরে যাননি? ১৯৯৬ সালে যে বিধ্বংসী আন্দোলন করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে, তখন তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে ছিল না। তখন আপনারা জ্বালাও-পোড়াও করেছেন, তত্ত্বাবধায়কের দাবি তুলেছেন। তখন সব দল মিলে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হলো। তাহলে আজ যাবেন না কেন? এক মুখে দুই কথা হয় কীভাবে? আজ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। যারা আপনার হালুয়া রুটি খেয়েছে তাদের ভিন্ন কথা।’
জিয়াউর রহমান আর্কাইভের সম্পাদক সঞ্জয় দে রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চিত্রশিল্পী আব্দুস সাত্তার, বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানসহ অন্যরা।