চট্টগ্রামের একটি বহুতল ভবনের লিফটের নিচ থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকার আম্বিয়া গ্রিন নামের ভবন থেকে বৃহস্পতিবার রাতে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
নিহত প্রীতম কান্তি চৌধুরী হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা এলাকার বাসিন্দা ও হাটহাজারী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের পরিবার থেকে জানা যায়, সদরঘাট এলাকার ফোর স্টার কমিউনিটি সেন্টারে প্রীতমের বড় বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখান থেকে পাশের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় খালার বাসায় খাবার দিতে এসেছিলেন তিনি। খাবার দিয়ে প্রীতম যে আর বোনের অনুষ্ঠানে ফিরে যাননি সেটিও বিয়ের ব্যস্ততার কারণে তার পরিবারের লোকজন লক্ষ্য করেননি।
আবার প্রীতমের খালার বাসার ভবনটির তৃতীয় তলায় আরেকটি ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। যে কারণে সেখানেও প্রচুর লোক ছিল ও তারাও লিফট ব্যবহার করছিল। রাতে কয়েকজন ভবনটির তত্ত্বাবধায়ককে লিফটে সমস্যা হচ্ছে বলে জানায়।
পরে ভবনের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন চন্দ্র দাস লিফটের নিচে মানুষ পড়ে থাকতে দেখে সবাইকে জানান। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে তারা এসে লিফটের নিচ থেকে প্রীতমের মরদেহ উদ্ধার করেন।
ভবনের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন চন্দ্র দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত নয়টার দিকে লিফটে বেশ কয়েকজন একসঙ্গে নামার পর আমাকে জানায় যে লিফট দুলছে আর কেমন যেন শব্দ করছে। তখন ভেতরে কোনো তার ছিঁড়ে গেছে কিনা দেখার চেষ্টা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম যদি ভেতরে কোনো তার ছেঁড়া দেখি তাহলে লিফট বন্ধ করে সার্ভিসিংয়ের লোক ডাকব। তখন ছোট্ট একটা ফাঁক দিয়ে ভেতরে টর্চের আলো ফেলায় মানুষের মত কিছু দেখতে পাই। পরে সেটা সবাইকে জানাই।’
প্রীতমের মরদেহ উদ্ধার করেন নন্দন কানন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তারা। এই স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডার্কলাইনের নিচ থেকে তার মরদেহটা উদ্ধার করেছি। অর্থাৎ লিফটের যে অংশে আমরা দাঁড়াই সেখান থেকে না, ওটার নিচ থেকে। সেখানে কীভাবে গেল বুঝতে পারছি না।লিফট কয়েক ফ্লোর ওপরে ছিল।’
এই ঘটনায় সদরঘাট থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন নিহতের বাবা শিমুল কান্তি চৌধুরী। সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদরঘাট থানা পুলিশ।
থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ লিফটের নিচে কীভাবে গেল সেটা বলা যাচ্ছে না, আমরা কোনো সম্ভবনাকেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। সবদিক বিবেচনায় রেখেই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।’
ওসি আরও বলেন, ‘নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশে থেঁতলানো আঘাত ছিল। সাধারণ কেউ উপর থেকে নিচে পড়লে এই ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এ দিকে শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে নিহত প্রীতম চৌধুরীর সৎকার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তার বন্ধু জয় সেন।
তিনি বলেন, ‘দুই বোনের একমাত্র ছোটভাই ছিল প্রীতম। রাতে তার মৃত্যু সংবাদ যখন পাওয়া যায়, তখন কাছাকাছি কমিউনিটি সেন্টারে তার মেজো বোনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। তাই মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখে দ্রুত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। শুক্রবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে তার সৎকার সম্পন্ন হয়েছে।’