মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চা বাগানের শিশুদের বিকাশে এক নবদিগন্ত সূচনা করেছে ‘আলোয়-আলো প্রকল্প’।
২০১৯ সাল থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২টি হাওর ও ৩০টি চা বাগান এলাকায় চাইল্ডফান্ড কোরিয়ার অর্থায়নে ও এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রচেষ্টা, আইডিয়া, এমসিডা ও বিটিএস বাস্তবায়ন করছে ‘আলোয়-আলো প্রকল্প’। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, চা শ্রমিক শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে চা বাগান পরিচালিত কুরমা চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগের অবস্থা পাল্টে গেছে। এ বিদ্যালয়ে প্রচেষ্টার পরিচালিত শিশুদের জন্য গড়ে ওঠা ‘আলোয়-আলো প্রকল্প’ শিশুদের প্রাক-শৈশব বিকাশে সাড়া জাগিয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিশুদের খেলাধুলা, নাচ গান ও শিক্ষা প্রদানের কারণে তারা মনোযোগী হয়ে উঠছে এবং পাশাপাশি তাদের মা-বাবাও নিশ্চিন্তে শিশুটিকে রেখে কাজে যেতে পারছেন।
কুরমা চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডে কেয়ার কেন্দ্রে শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ ও গ্রাজুয়েশনের মাধ্যমে ইসিডি সেন্টারে (শিশুকানন কেন্দ্র) শিক্ষা গ্রহণ করছে।
আলোয়-আলো প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প থেকে চা-বাগানের শিশুদের জন্য একটি পাকা অবকাঠামো, স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, শিশুকানন পরিচালনার যাবতীয় উপকরণ ও শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়। ১৫১ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ ও ৩২টি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। ৩২টি কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষায় কমিটি গঠন ও ৩২টি এডলোসেন্ট অ্যান্ড ইয়থ ক্লাব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ৩২টি কমিটি দূর্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনায় শারীরিক বিকাশে মায়েদের পুষ্টিবিষয়ক সভা, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে প্রশিক্ষণ এবং ওয়াটার সেনিটেশন ও হাইজিনের জন্য ৩০টি ডিপ টিউবওয়েল, ৯১টি স্যালো টিউবওয়েল ও ১২৪টি টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।
কুরমা চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার পাল বলেন, ‘আলোয়-আলো প্রকল্পের কার্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিকের পূর্বে শিশুদের খেলাধূলা, নাচ গান ও শিক্ষা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে পরবর্তী ক্লাসগুলোতে শিশুরা শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে।’
আলোয়-আলো প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হামিদুল ইসলাম জানান, চা বাগানের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের বিকাশে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক আলী নকি খান বলেন, ‘চা বাগান ও হাওর এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানসিক বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রকল্প ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।’
দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসকরণে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আলোয়-আলো প্রকল্প চা বাগানে শিশুদের বিকাশ ও শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এতে শিশুদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বাড়ছে।’