টানা বৃষ্টিতে আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেট। নগরের বেশির ভাগ এলাকাই তলিয়ে গেছে পানিতে।
সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকানপাট সব পানিতে একাকার। পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও।
তিন দিন ধরে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হলে রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। শনিবার সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরের বেশির ভাগ এলাকা।
এ রিপোর্ট লেখার সময়ও শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বৃষ্টি হচ্ছিল, বাড়ছে পানিও।
নগরের অন্যতম উঁচু এলাকা শাহী ঈদগাহ। শুক্রবার রাতেই এ এলাকার বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।
এ এলাকার বাসিন্দা রাজিব রাসেল বলেন, ‘রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। সময় সময় পানি বাড়ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনবার ঘরে পানি ঢুকল।’
শাহী ঈদগাহর মতো নগরের উঁচু এলাকা টিলাগড়, মেজরটিলা এলাকারও অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। আর নিচু এলাকার অনেক রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি হয়ে গেছে।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পানিতে তলিয়ে গেছে নিচতলা। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।
হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ জানান, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এবং সব ছাত্রাবাসের নিচতলায় পানি উঠে গেছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও জলের নিচে। হাটু পানি ভেঙেই চিকিৎসকরা ডিউটিতে গেছেন।
নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে শুক্রবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তার নিজ বাসাও জলমগ্ন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার করা হলেও আমাদের ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হচ্ছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।’
একাধিক সূত্র জানায়, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘির পাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরাণ, কুয়ারপাড় উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।
নগরের পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক আবদুল কাদির তাপাদার। এ কারণে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার রাত একটার দিকে আমার ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন আসবাবপত্র বাঁচাতে এগুলো খাটের ওপর রেখেছি। আমার পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।
‘এখনও পানি বাড়ছে। আরও পানি বাড়লে বাসা ছেড়ে যেতে হবে। আমাদের এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের অবস্থাই এমন।’
তালতলা এলাকার বাসিন্দা সানাওর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে আমার ঘরে পানি ঢুকে। এতে ঘরের আসবাবপত্রসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যেভাবে টানা বৃষ্টি চলছে, পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশকিল।’
নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা এম জে এইচ জামিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বার বার নগরবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ভারি বৃষ্টির কারনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। ড্রেন, নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।’
এ ছাড়া সুরমা নদী খনন করানোও জরুরি বলে জানান তিনি।