সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সফরকালে কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ তোলেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কেউই কোনো কথা বলেনি। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি এবং কেউ এ ধরনের কথা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেননি।’
গণভবনে শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে যান প্রধানমন্ত্রী। ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করে ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে যান তিনি। পরে সেখান থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফিরে আসেন সরকারপ্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮ সালে হয়ে গেছে না আমাদের! তারপরও আবার কেউ তা চাইতে পারে? আর সিস্টেমটা তো বিএনপিই নষ্ট করে ফেলেছে। কাজেই এরকম কোনো কথা হয়নি।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলনের নামে লোক সমাগম করে যাচ্ছে, ভালো কথা। এতদিন চুরি-চামারি করে যে অবৈধ অর্থ তারা বানিয়েছিল, যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছিল, সেগুলোর এখন ব্যবহার হচ্ছে।
‘অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা তো যাচ্ছে! আমি সেভাবেই বিবেচনা করি। যত আন্দোলন করবে, তাতে সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। তাই আমি বলেছি- কিছু বলার দরকার নেই, তারা আন্দোলন করতে থাকুক। কারণ এই টাকাগুলো তো বের হওয়াটাও দরকার।’
বিএনপির এই অর্থের উৎস সম্পর্কে সাংবাদিকদের খোঁজ নেয়ার আহবানও জানান তিনি।
তবে আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপিকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘যদি মানুষের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, আগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা নাশকতার প্রচেষ্টা চালায় তাহলে কিন্তু ছাড়ব না! কারণ আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে।’
জনগণের প্রতি আস্থা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠাণ্ডা করে দেবে। কারণ তারা যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, তখন সাধারণ মানুষই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল; এবারও তাই হবে।’
এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, ডেঙ্গুসহ চলমান অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের কার্যকর ভূমিকাসহ আসন্ন দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বিভিন্ন সমকালীন বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান।
বিদেশি কূটনীতিকদের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই কথাটা আমি বলেছি তাদেরকে, আমাকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করেছি এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারপর সেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে এবং একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামল ছাড়া অন্য যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশকে কী উন্নতি দিয়েছে? এমনকি জনগণের মুখে একমুঠো ভাত পর্যন্ত তুলে দিতে পারেনি। সারা বছর দেশের উত্তরবঙ্গ, এমনকি দক্ষিণের অনেক জায়গাতেও দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত।’
জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে- সেটা সবাই জেনে নিন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা- এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না, দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।