আগামী ৯ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরী নেভাল এভিনিউস্থ তিন রাস্তার মোড়ে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ পরবর্তী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আগামী ৮ অক্টোবর থেকে আমরা নতুন কমর্সূচি চট্টগ্রাম থেকে ঘোষণা করছি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ভালোয় ভালোয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
কর্মসূচিগুলো হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ৯ অক্টোবর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর দাবিতে ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেশন, ১৪ অক্টোবর সারা দেশে অনশন কর্মসূচি এবং ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ। ১৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বন্দুকের জোরে টিকে আছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চট্টগ্রামে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে। সব মানুষ আজ রাস্তায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে বন্দুকের জোরে। ওরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। সব মানুষের মুখে এখন একটাই স্লোগান, শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি। ওই বার্তা আমরা নিয়ে এসেছি। অনেক কথা হয়েছে। রোডমার্চ, সমাবেশ হয়েছে। এটাই শেষ রোডমার্চ। এরপর আর রোডমার্চ হবে না। সব হবে ঢাকায়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা, আপনি অনেক মানুষ খুন করেছেন। হাত রঞ্জিত করেছেন, আমাদের অনেক ভাইকে হত্যা করেছেন, স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, সন্তানকে পিতৃহারা করেছেন। আমরা আর এসব করতে দেব না। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, অন্যায় হুকুমের মধ্যে কোনো গুলি করবেন না, কোনো নির্যাতন, কোনো মিথ্যা মামলা করবেন না।
খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচি বলেন, মানুষ আজ জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের জনগণ আজ চায় শান্তিপূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। আপনার অধীনে আর নির্বাচন আমরা চাই না। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। মানুষ তার ভোট দিয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচন করবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ হত্যার রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। আমরা শুধু এ মাস দেখব। সামনে দুর্গাপূজা, কঠোর আন্দোলনে আমরা যেতে চাই না। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে আমরা নতুন কমর্সূচি চট্টগ্রাম থেকে ঘোষণা করছি। এর মধ্যে আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ভালোয় ভালোয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী। যদি কোনো অশান্তি, কোনো হয়রানি বা মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয় তা বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। আঘাতের জবাবে প্রত্যাঘাত করা হবে। প্রতিরোধ করা হবে। এ হবে এ মুহূর্তের বিজয়ের সূচনা। তাদের পতন অবশ্যই হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা থেকে শুরু করে লাখ লাখ জনতা আমাদের সঙ্গে এই রোডমার্চে অংশগ্রহণ করেছে। বৃষ্টি হয়েছে, তবুও কেউ যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই রোডমার্চ দেখে শেখ হাসিনাকে শেষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ ও কুমিল্লা রোডমার্চের যে বার্তা শেখ হাসিনাকে দিয়েছে, সেই কপালের লিখন যদি তিনি পড়তে না পারেন তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য। আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। র্যাব, পুলিশ, বিচার বিভাগ দিয়ে রেজিমে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আর বিএনপি পরিণত হয়েছে খাঁটি সোনায়। আমাদের ৪০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা ঘরে থাকতে পারে না। তাই বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিএনপি নেতারা জলে ভিজে আর রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনীতি ওই রেজিমের বিপক্ষে। এটা কোনো দল নয়। সরকারের নির্ভরশীলতা ভোটচুরির প্রকল্পের পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি। এ দুর্বৃত্তরা জনগণের সামনে আর দাঁড়াতে পারবে না। সারাবিশ্বের কাছে এরা ভোটচোর। এজন্য স্যাংশন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আজ সমস্ত বিরোধীদল ঐক্যমতে পৌঁছেছে। সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশকে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোড় মার্চে লাখ লাখজনতার সমাবেশ হয়েছে। শেখ হাসিনা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা সফল হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে রোড মার্চ কর্মসূচী সফল হয়েছে। তাই আসুন, আরামকে হারাম করে সরকার পতনের ফাইনাল আন্দোলনে নেমে পড়ি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করি।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভালবাসে। অথচ তাকে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরবন্দি করে রেখেছে। তিলে তিলে তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সময় তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল। বিদেশে চিকিৎসা করাতে গেলে সেটা ধরা পড়ে যাবে। তাই তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর প্রতি এমন অবিচার জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে গণতন্ত্রকে হত্যার অভিযানে ব্যস্ত। রক্ষী বাহিনী দিয়ে ২০ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যার ইতিহাস এই আওয়ামD লীগের। এর বিচার অবশ্যই জনগণ করবে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এই সরকার দেশ ধ্বংস করেছে, ব্যাংক লুট করেছে। পদত্যাগের পর জানা যাবে কতশত কোটি টাকা তারা লুট করেছে। আমরা একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। একদফা মানে এই সরকারের পদত্যাগ।
সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এক মুহূর্তের জন্যও শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অক্টোবর মাস হবে শেখ হাসিনার পতনের মাস। অক্টোবর মাসেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা খুবই নাজুক। আই এম এফ বলছে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। বাস্তবে আছে বিলিয়ন ১৭ বিলিয়ন ডলার। যা আছে তা দিয়ে মাত্র তিন মাস চলবে। ব্যবসায়ীরা এল সি খুলতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা সব বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগ ভিতরে ভিতরে আপস করে ক্ষমতায় এসেছে।
আরও বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মৎস্যজীবী সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, মোস্তাক আহমেদ, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক মা ম্যা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, গাজী শাহজাহান জুয়েল, আলমগীর মাহফুজুল্লা ফরিদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাচিং প্রু জেরী, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, তরিকুল আলম তেনজিং, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপন তালুকদার দিপু, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, মহিলা দল নেত্রী শামীমা বরকত লাকী, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সি যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম, খাগড়াছড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. মিয়া ভোলা, নাজিমুর রহমান, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এনামুল হক, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ।