গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলাকে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, কল্পিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ গত ৩০ মে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি করে কমিশন।
মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এ ছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসকে তলব করে দুদক। তাদের দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে নোটিশ দেয় সংস্থাটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে দুদকে যান ড. ইউনূস।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইউনূস দুদক কার্যালয় থেকে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বের হন। পরে তার আইনজীবী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি পাশে ছিলেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে দুদক ছাড়েন ড. ইউনূস।
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি ড. ইউনূস সাহেবের আইনজীবী হিসেবে ভেতরে (দুদক কার্যালয়ে) গিয়েছিলাম এবং আমি আইনের সমস্ত ব্যাখ্যা ওইখানে দিয়েছি। উনারা বলেছে, ওই সমঝোতা চুক্তিটি জাল। আমি বলেছি আপনারা জাল বলতে পারেন না। কারণ দুই পক্ষের সমঝোতা যখন হয়, তখন আর সেটা জাল থাকে না এবং এটা হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়া। সুতরাং এটা জাল না।
‘ওই চুক্তিতে ছিল শ্রমিকদের সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে আমরা অ্যাকাউন্ট করেছি। হ্যাঁ, আমরা টেলিফোনে অনুমতি নিয়েছি। কারণ সবাই একসাথে থাকে না। আমরা ৯ তারিখের জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার অনুমতি নিয়েছি।’
আইনজীবী আরও বলেন, “দুদক বলেছে, ‘আপনারা অনুমতিটা পরে নিয়েছেন।’ আমি বলেছি, ‘দেরি হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’ এই মামলা অবশ্যই ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক অভিযোগে তার (ইউনূস) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।’
এর আগে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে ডাকা হয়েছিল। তাই আমি এসেছি। যেহেতু এটা আইনগত বিষয়, তাই আমার আইনজীবী কথা বলবে।’
এরপর ড. ইউনূসের আইনজীবী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ তদন্ত চেয়ে দুদকের চিঠি
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ২০২২ সালের ২৩ জুলাই ড. ইউনূসের নামে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে চিঠি দেয়।
১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণ টেলিকমের বেশির ভাগ লেনদেনই সন্দেহজনক বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আইএলওতে দেয়া শ্রমিকদের অর্থপাচারের অভিযোগেরও তদন্ত চায় চিঠিতে।
ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ এনে গ্রামীণ টেলিকম ও এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের নামে ১১০টি মামলা করেন শ্রমিকরা। সম্প্রতি ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা ৪৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করলে ইউনূসের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন শ্রমিকরা। এরপর মামলার রফাদফার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
গত ১৪ জুলাই ইউনূসের নামে দুদকে দুর্নীতি অনুসন্ধানের আবেদন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। ২০১০ সাল থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টনে অনিয়ম হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি গ্রামীণ টেলিকম।