বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২৫ বছর আগে ঢাকায় হারানো মাইদুল খুঁজে পেলেন পরিবার

  • প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম   
  • ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৫:১০

মাইদুল ইসলাম বলেন, একদিন আরজে কিবরিয়া ভাইয়ের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমার হারিয়ে যাওয়ার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে দেখান করেন।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় প্রায় ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাইকে ফিরে পেলেন স্বজনরা।

উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে শনিবার সকালে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের গোপালপুর উত্তর সরকারটারী মাঠের পাড় গ্রামের লোক সমাগম ঘটেছে। সাড়ে ১১টার দিকে একটি অটোরিক্সা থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নামলেন মাইদুল ইসলাম। ওই সময় প্রতিবেশী ও স্বজনরা ফুলের মালা ও মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নেন তাকে।

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও বানেছা বেগমের দুই ছেলে মতিয়ার রহমান ও মাইদুল ইসলাম। তারা দুই ভাই মায়ের সঙ্গে ঢাকা গিয়ে হারিয়ে যান ১৯৯৭ সালের দিকে। এরপর থেকে অনেক খোঁজার পরেও তাদের দুই ভাইকে আর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর ছোট ছেলে মাইদুল ইসলামকে ফিরে পেল তার পরিবার।

মাইদুল ইসলামের বাবা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ওর মা বানেছা বেগমের সাথে পারিবারিক কলহের কারণে তালাক হয়ে যায় প্রায় ২৫/২৬ বছর আগে। বেশ কিছু দিন দুই ছেলে তার কাছেই ছিল। মাঝে মধ্যে বানেছা বেগমের বাবার বাড়িতেও যেত। এরমধ্যে বানেছা বেগম তার দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকা পারি জমায়। সেখানেই তিনি আরেকটি বিয়ে করেন।

‘বানেছা বেগম দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে সংসার পাতলেও দুই ছেলের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। কিন্তু বানেছা বেগম ছেলে দুটোর বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতো না। বলতো বিদেশে যেতে বিমান দুর্ঘটনা মারা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ দীর্ঘ ২৫টি বছর পর আমার ছোট ছেলেকে পেলাম। আল্লাহর কাছে অনেক কান্না করেছি। এখন বড় ছেলের খোঁজ পেলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো।’

মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মা প্রথমে আমাদের দুই ভাইকে রংপুর নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা। সে মানুষের বাসায় কাজ করত। আমাদেরকে একটি বাসায় রেখেছিল দিনাজপুরের ঠিকানা দিয়ে। যে বাড়িতে রেখেছিল সেই বাড়ির মালিকের টাকা চুরি হয়। সে আমাকে সন্দেহ করে। ভেবেছিল মা অথবা বড় ভাই টাকা দিবো।

‘এজন্য আমাকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখে। পরে তার মেয়ে ঘরের দরজা খুলে দেয় আমাকে বের হয়ে যেতে। সারাদিন না খেয়ে ছিলাম। পরে একজন নারী আমাকে পেয়ে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা নিয়ে আসে। সেখানেই বড় হই তাদের সন্তান পরিচয়ে। বড় হয়ে ঝালমুড়ির ব্যবসা শুরু করি। এরপর সেখানেই বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘‘একদিন আরজে কিবরিয়া ভাইয়ের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমার হারিয়ে যাওয়ার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে দেখান করেন।

‘‘ঘটনা চক্রে মায়ের কিছু কথা সত্য হলেও বেশির ভাগ কথাই মিথ্যে ছিল। কিন্তু আমার বাবার বলা কথা গুলো শতভাগ মিলে গেছে। তাই আমি নিশ্চিত হয়েছি তারাই আমার প্রকৃত মা-বাবা। নিজ গ্রামে ফিরে এসে শৈশবের অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়েছে। এরমদ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাড়ি পাশে মসজিদ।’’

মাইদুল ইসলাম আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘বড় ইচ্ছা ছিল আমার বড় ভাই আজ আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিবে। কিন্তু সেই ভাইকে আজও পাওয়া যায়নি। এখন আমি নিজেই বড় ভাইকে খুঁজে বের করব। বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’

মাইদুলের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বলেন, ‘এটা যে কি আনন্দ বলে বুঝাতে পারবো না। খুবই খুশি হয়েছি আমার স্বামী তার বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ায়।’

মাইদুল ইসলামের চাচা বদিউজ্জামাল বলেন, ‘মাইদুল ও মতিয়ার আমার ভাতিজা। ওরা দুজন প্রায় ২৬ বছর আগে ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজা খুঁজি করে আমরা তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবান মাইদুলকে ফিরে পেলাম। আশা করি কোন একদিন মতিয়ারকেও খুঁজে পাব।’

স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, ‘আমি দেখেছি মাইদুল ও মতিয়ার ৫-৬ বছর বয়সে ওর মা দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকা চলে যান। কিছু দিন পর শুনি ওরা দুই ভাই হারিয়ে গেছে। প্রায় ২৬ বছর পর ছোট ভাই মাইদুল ফিরে এলো মতিয়ারকে পাওয়ার আশায় আছে তার পরিবার।’

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ‘সন্তোষপুর ইউনিয়নে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর জানতে পেরেছি। সেখানে আব্দুস সামাদ নামে এক বাবার দুই সন্তান হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এক ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে। মাইদুল ইসলাম যদি চায় তাহলে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনাসহ পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর