চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতাধীন একটি বাজারের বৈধ ইজারাদারকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে হাসিল তুলতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে।
এতে বৈধ ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও স্থায়ীভাবে হাসিল আদায় শুরু করতে পারেননি সাইফুল ইসলাম।
এ ঘটনায় দুই দফায় চসিক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও চূড়ান্ত প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন সাইফুল।
তিনি জানান, চলতি বছরের ৬ মার্চ দরপত্রে অংশগ্রহণ করে ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরও অজানা কারণে অনুমতিপত্র দিতে নানা টালবাহানা করে চসিকের সংশ্লিষ্ট শাখা। এদিকে বাজারের হাসিল সংগ্রহ করেন নুরুল বিপলু ও হায়দার আহমেদ নামের দুই ব্যক্তি।
সাইফুল জানান, কয়েকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে প্রায় চার মাস পর ২৪ জুলাই হাসিল সংগ্রহের অনুমতিপত্র দেয় চসিক। এর মধ্যে মূল ইজারাদার সাইফুল গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আম-মোক্তারনামা দলিলের (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) মাধ্যমে তার বড় ভাই মোহাম্মদ আকতার হোসেনকে হাসিল আদায়ের দায়িত্ব দেন তিনি।
আকতার হোসেন জানান, অনুমতিপত্র পেয়ে হাসিল সংগ্রহ করতে গেলে তাকে বাধা দেন বিপলু ও হায়দার। পরবর্তী সময়ে কয়েকবার চেষ্টা করেও হাসিল আদায় শুরু করতে না পারায় ২০ আগস্ট চসিক মেয়রকে লিখিত অভিযোগ জানান সাইফুল।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ আগস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাজারে গিয়ে আকতার হোসেনকে ইজারার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে হাসিল আদায়ের জন্য বলেন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর আকতার হোসেনকে ফোন করে হাসিল তুলতে নিষেধ করেন আবুল হাশেম।
আকতার হোসেন বলেন, ‘উনি আমাকে হাসিল তুলতে নিষেধ করেন। পরদিন থেকে সিটি করপোরেশনের লোক হাসিল তুলবে বলে জানান। আমি হাসিল তুলতে গেলেই আমাকে পুলিশে দেবেন বলে হুমকি দেন।’
পরদিন বাজারে গিয়ে রফিক নামের সিটি করপোরেশন এস্টেট শাখার একজন কর্মচারীসহ বিপলু ও হায়দারকে হাসিল সংগ্রহ করতে দেখেন বলে জানান আকতার।
সর্বশেষ মঙ্গলবার চসিক কর্মচারী রফিকসহ হায়দার ও বিপলুকে বিবিরহাট বাজার থেকে হাসিল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তাদের তিনজনই চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন আকতার।
সপ্তাহে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার কাঁচাবাজার বসে বিবিরহাটে। ইজারাদারের দাবি, প্রতি বাজারে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা করে হাসিল সংগ্রহ হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা হাসিল আদায় হয় এ বাজার থেকে। এ ছাড়া বাজারের দোকানগুলো থেকেও হাসিল আদায় হয় ৫০ হাজার টাকার বেশি। সেই হিসাবে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকার মতো হাসিল আদায় হয় ওই বাজার থেকে।
গত পাঁচ মাস ধরে এ টাকা মেয়রের একান্ত সচিব ও তার সহযোগীদের পকেটে ঢুকছে বলে দাবি সাইফুল ও আকতারের।
বৈধ ইজারাদারকে হাসিল আদায়ে বাধা ও নিজেদের লোক দিয়ে হাসিল সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বলেন, ‘বিপলু ও হায়দার ইজারাদারের ব্যবসায়িক অংশীদার। দরপত্রের টাকা দেয়ার সময় তারাও দিয়েছে ও সেসব নথিও দেখিয়েছেন।
‘সাইফুল ও আকতার এটা নিয়ে মেয়র মহোদয়কে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাই তাদের বিষয়টি মীমাংসার জন্য দুই পক্ষকেই বাজারের হাসিল সংগ্রহ না করার জন্য বলেছি। এস্টেট শাখার লোক দিয়ে আমরা নিজেরাই হাসিল আদায় করছি।’
এস্টেট শাখার কর্মচারীর সঙ্গে অভিযুক্ত হায়দার ও বিপলুও কীভাবে হাসিল আদায় করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি। শুধু রফিককে হাসিল আদায় করতে বলেছি, তার সঙ্গে আর কেউ থাকতে পারবে না। তাদের নিষেধ করে দিতে বলেছি।’
বিপলু ও হায়দারের সঙ্গে আক্তার বা মূল ইজারাদার সাইফুলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন আকতার হোসেন। এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ইসলাম স্বাক্ষরিত হাসিল আদায়ের অনুমতিপত্রেও তাদের নাম পাওয়া যায়নি।
এখন পর্যন্ত বিবিরহাট বাজার থেকে আদায় করা হাসিলের কী পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে জানতে চাইলে আবুল হাশেম বলেন, ‘এটা এস্টেট শাখা জানবে। আমি জানি না।’
এ বিষয়ে চসিক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।