বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কেন্দ্রে এসেও দেয়া হলো না পরীক্ষা

  • প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ   
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৯:১৮

পরীক্ষার্থী মুন্নী আক্তার বলেন, ‘আমি তো পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্রে এসেছিলাম। আর কেন্দ্রে তো ডাক্তার থাকেন। স্যার চাইলে আমাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে বিশেষ কোনো উপায়ে পরীক্ষা নিতে পারতেন। কারণ কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। স্যারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল।’

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শিক্ষকের ভুল সিদ্ধান্তে এইচএসসির পৌরবিজ্ঞান ও সুশাসন বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারেননি এক পরীক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার সকালে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের প্রভাষক ফিরোজ ইসলামকে কেন্দ্রে থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

পরীক্ষার্থী মুন্নী আক্তার দরগ্রাম সরকারী ভিকু মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। নাগরপুর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের রাথুরা এলাকার রমজান আলীর স্ত্রী তিনি।

স্থানীয়দের বরাতে সূত্র জানায়, সকালে স্বামী রমজান আলীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নাগরপুর উপজেলার রাথুরা থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে পৌরবিজ্ঞান ও সুশাসন পরীক্ষা দিতে সাটুরিয়ার সৈয়দ কালুশাহ কলেজে আসছিলেন মুন্নী আক্তার। পথিমধ্যে মোটরসাইকেলের চাকার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে তিনি রাস্তা পড়ে যান এবং মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন তিনি। ওই অবস্থায় সকাল পৌনে ১০টার দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হন তিনি।

এসময় চিকিৎসার জন্য মুন্নী আক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে বলেন সৈয়দ কালুশাহ কলেজের প্রভাষক ফিরোজ ইসলাম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চিকিৎসা নিয়ে পৌনে ১১টার দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন তিনি। ততক্ষণে পৌরবিজ্ঞান ও সুশাসন প্রশ্নপত্রের এমসিকিউ পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে যায় এবং এমসিকিউ পরীক্ষা দিতে না পারায় বাকি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি মুন্নী।

স্বামী রমজান আলী বলেন, ‘অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার পরও আমার স্ত্রী পরীক্ষা দিতে এসেছিল, কিন্তু ফিরোজ স্যারের জন্য আমার স্ত্রী পরীক্ষা দিতে পারল না। আমরা তো স্যারের কোনো ক্ষতি করি নাই। তাহলে স্যার আমাদের এত বড় ক্ষতি করল কেন! কারণ স্যারে হাসপাতালে যেতে না বললে তো আমরা হাসপাতালে যেতাম না।’

পরীক্ষার্থী মুন্নী আক্তার বলেন, ‘প্রত্যেকের জন্য এমসিকিউ বাধ্যতামূলক এবং ৩০ মিনিটে ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে পরীক্ষার বাকি অংশ দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

‘তাছাড়া আমি তো পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্রে এসেছিলাম। আর কেন্দ্রে তো ডাক্তার থাকেন। স্যার চাইলে আমাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে বিশেষ কোনো উপায়ে পরীক্ষা নিতে পারতেন। কারণ কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। স্যারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। স্বামীর সংসার করে, খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করেছিলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

অব্যাহতি পাওয়া প্রভাষক ফিরোজ ইসলাম জানান, পরীক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে উপজেলা হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছিল। কারণ তার মাথা ফেটে ও হাত কেটে যাওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষণ হচ্ছিল। কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে আসতে এমসিকিউ পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। তাই সে আর বাকি আড়াই ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গণেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘পরীক্ষার প্রায় একঘণ্টা পর বিষয়টি জানতে পারি এবং তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাই। একইসঙ্গে বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডকেও অবহিত করেছি আমি। তবে ইউএনও এবং শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষ ব্যবস্থায় তার পরীক্ষা নেয়া উচিত ছিল।’

সাটুরিয়ার ইউএনও শান্তা রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব আমাকে অবহিত করলে বিশেষ ব্যবস্থায় তার পরীক্ষা নেয়া যেত। কিন্তু পরীক্ষার্থী বা শিক্ষক কেউ আমাকে বিষয়টি জানাননি। ঘটনা শোনার পর প্রভাষক ফিরোজ ইসলামকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। কারণ পরীক্ষার্থীদের জন্য সকল ব্যবস্থা কেন্দ্রের ভেতরে রাখা হয়েছে। যা ঘটেছে বিষয়টি দুঃখজনক।’

এ বিভাগের আরো খবর