ফেসবুকে পোস্ট শেয়ার করায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রকে মারধর করে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর নাম ইব্রাহিম জনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রসায়ন বিভাগের ছাত্র।
অভিযুক্তরা হলেন দর্শন বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ মেহেদী হাসান ও অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল মাহমুদ রানা। রানা অর্থনীতি বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযুক্ত দুজনই জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী।
অভিযোগকারী ইব্রাহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তিনি বুধবার নিউজবাংলাকে জানান, ছাত্রলীগের দুই নেতা-কর্মী তাকে মারধর ও ছিনতাই শেষে হুমকি দিয়ে বলেন, “তুই যদি এ বিষয়গুলো কারও সঙ্গে শেয়ার করস, তাহলে তোরে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে মেরে ক্যাম্পাসের মেইন গেটে ঝুলায় রাখব।”
ইব্রাহিম লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘‘শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ১৮তম ব্যাচের ওরিয়েন্টেশনের কাজ শেষ করে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় অর্থনীতি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের ইকবাল মাহমুদ রানা ও দর্শন বিভাগের ১২তম আবর্তনের মোহাম্মদ মেহেদি আমার পথ রোধ করেন ও জিজ্ঞাসা করেন, আমি কেন সৌরভ ভাইয়ের পোস্ট শেয়ার করেছি। তারা আরও বলেন, ‘তুই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পোস্ট শেয়ার দিছস কেন?’’
ইব্রাহিম জানান, সৌরভ দাস রসায়ন বিভাগ ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। তাকে গত ৩১ জুলাই দফায় দফায় হামলা করে মারাত্মক আহত করা হয়।
অভিযোগে ইব্রাহিম ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বক্তব্য উ্দধৃত করে লিখেন, “তোদের ব্যাচের সব পোলাপান তো পোস্ট শেয়ার দেয় নাই। শুধু তুই শেয়ার দিছস। কারণ নিশ্চয়ই তুই শিবির করস।’ এমন নানা ধরনের প্রশ্নের পর তারা আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চেক করে। মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে আমাকে বারবার মেরে ফেলার ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেয়।
“পরবর্তী সময় তারা আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধর করে। এরপর তারা আমার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।”
টাকা আদায়ের বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়, “তুই (ইব্রাহিম) যদি এখন টাকা না দেস, তবে আকতার (জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইরে দিয়ে তোরে জেলে ঢুকায় দিব। শিবির ট্যাগ নিয়ে একবার জেলে ঢুকলে নির্বাচনের আগে আর বের হতে পারবি না, সেটা তুই ভালো করেই জানস।’ এসব কথা বলে ওই দুইজন আমাকে মারধর করে বাবা, মা ও টিউশনগুলোর অভিভাবকদের বাসায় ফোন দিয়ে ১৩ হাজার টাকা নেন বিকাশের মাধ্যমে।”
ইব্রাহিম আরও অভিযোগ করেন, “তারা বলে, ‘আমাদের (ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী) ছাত্রত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। সাত দিনের বেশি বহিষ্কার করে রাখতে পারবে না।’ এসব বলে ওই সময় তারা আমাকে মারধর করে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে ও আমাকে বাধ্য করেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে যে, আমি আগে শিবির করতাম আর এখন থেকে ছাত্রলীগ করব।”
অভিযোগে বলা হয়, “পরিশেষে তারা বলে, ‘তুই তো এডা শেয়ার করবি সবার সঙ্গে। তাই আমরা প্রমাণ রাখলাম যে তুই শিবির। জানোসই তো, শিবির মারলে সব মাফ।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইকবাল মাহমুদ রানা বলেন, ‘ইব্রাহিমের কাছে একটা ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সে ভুল স্বীকার করে পোস্ট মুছে দিয়েছে। তাকে মারধর ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অপর অভিযুক্ত মেহেদী বলেন, ‘ওই ছেলেটা নিজে স্বীকার করেছে, সে শিবির করে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। তাকে মারধর ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছিল, এ জন্য ফোনে ফ্লেক্সিলোড দিছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম আকতার হোসাইন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছে। প্রক্টর স্যারের কাছে দুই দিক থেকেই অভিযোগ গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কোনো অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’
রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে।’
অভিযুক্ত ইকবাল মাহমুদ রানার বিরুদ্ধে এর আগেও সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
আরেক অভিযুক্ত মোহাম্মদ মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও হিমাচল পরিবহনের একটি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আটকে রেখে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগও রয়েছে। এসব নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।