নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় চুরির অভিযোগে এক যুবককে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভূপতিপুর গ্রামের হোরাগাজি বাড়িতে সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় পুলিশের করা হত্যা মামলায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিহত যুবকের নামেও একটি চুরির মামলা নিয়েছে পুলিশ।
প্রাণ হারানো ৩৭ বছর বয়সী নাসির উদ্দিন মাসুদ উপজেলার আমানউল্লাহপুর ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ছয়ানী ইউনিয়নের ভূপতিপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম, আরিফ ও একই গ্রামের রাহাত।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে জানায়, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হন ওই যুবক। টাকা যেন না দিতে হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই তাকে মেরে ফেলা হয়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে গাছের সঙ্গে একজনকে বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখা যায়। সেই সঙ্গে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘মেম্বারের সামনে সব বলে ফেল।’ এ কথা বলতে বলতে লাঠি দিয়ে মারধর করা হচ্ছিল বেঁধে রাখা ব্যক্তিকে।
পুলিশ ওই বাড়ি থেকে মঙ্গলবার দুপুরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে।
পিটুনিতে নিহত মাসুদের বোন রেখা আক্তার বলেন, ‘যে বাড়িতে ঘটনা ঘটেছে, ওই বাড়ির রিনা আমার জ্যাঠাত ভাইয়ের বউ। তিন বছর আগে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। তারপর থেকে রিনা তার বাবার বাড়িতে থাকত। রিনার সঙ্গে আমার বড় ভাই মাসুদের একটা সম্পর্ক বা লেনদেন হয়। বিদেশ পাঠানোর কথা বলে রিনার কাছে বিভিন্ন সময় রোজগারের টাকা রাখতেন আমার ভাই।
‘ঘটনার দিন বিকেলে পুকুর লিজ নেয়ার জন্য রিনার কাছে টাকা ফেরত চাইতে যায় মাসুদ ভাই। পরের দিন সকালে আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায়। তারা রাতে আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ মাসুদের চাচা জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাতের ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের নামে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় জমা দিই। ঘটনার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করে নাই।’ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘অনেকেই বলে মাসুদের সঙ্গে ওই বাড়ির মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা সম্পর্কে দেবর-ভাবী ছিল। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক আমরা বুঝতে পারতেছি না। মানুষ তো মুখ খুলে কথা বলতেছে না।
‘এখানে রাতে তিনটার সময় গাছের সঙ্গে বাঁধছে। অনেকগুলো মানুষ জড়ো হয়েছে। সকালে ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ফোনে আমাকে ঘটনা জানায়।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমি শুনেছি ঘরে চোর ঢুকছে। বাইনতে (বাঁধতে) পারে, পিডতে (পিটাতে) পারে, কিন্তু মারি ফালানো কোনো আইনে নাই তো।’ভিডিওর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ভিডিওটি দেখেছি, কিন্তু কোন মেম্বারের কথা বলেছে আমি জানি না। যারা ঘটনাস্থলে ছিল, তারা জানে। আমি তখন ছিলাম না। আমি সকালে ঘটনাস্থলে যাই।'বেগমগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক ফরিদুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা করেছে। অপরদিকে চুরির ঘটনায় গৃহকর্তা মামলা করেছেন।’মাসুদের চাচা জাকির হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা না নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একই ঘটনায় দুটি মামলা হয় না। ওদের কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্তে নিয়ে আসা হবে।
‘ঘটনার পর নিহতের কেউ না আসায় উপপরিদর্শক শাহেদুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।’বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিব বলেন, ‘আইন-বহির্ভূত কোনো কাজ পুলিশ সমর্থন করে না। যেহেতু হত্যা একটি ঘৃণ্য ঘটনা, তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তদন্তে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’