বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কই গেলারে আঁরে ফেলাই?’

  •    
  • ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৯:৩৭

শনিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে স্বামী ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন শরীফা। পরদিন ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করেন মাটির নিচে। প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রাণ হারায় ৭ মাসের কন্যা সন্তান বিবি জান্নাত। চিরতরে হারিয়ে যান স্বামী সোহেলও।

‘কই গেলারে আঁরে ফেলাই? আল্লাহ, তুমি কী করলা আমারে? আমারে তো শেষ করছে! আমার তো সব শেষ! সব শেষ, শেষ সব আমার!’

পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী ও সাত মাস বয়সী কন্যা সন্তান হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন শরীফা বেগম। একটু পর পর মৃত স্বামীর উদ্দেশে বলছিলেন, ‘কই গেলারে আঁরে ফেলাই? কোথায় রাখি গেলা আমারে?’

রোববার দুপুরে বন্দর নগর চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনের পেছনের পাহাড়ে আই ডব্লিউ কলোনিতে গিয়ে দেখা গেল শরীফার মর্মভেদী আর্তনাদ। তার বুক ফাটা ছুঁয়ে যাচ্ছিল আশপাশের সবাইকে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরাও।

শনিবার রাতেও সব ঠিক ছিল শরীফার। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে স্বামী ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। রোববার ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করেন মাটির নিচে। ঘটনা আঁচ করতে পেরে পাশে থাকা ৭ মাসের কন্যা বিবি জান্নাতকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পযন্ত ব্যর্থ হন তিনি।

প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রাণ হারায় বিবি জান্নাত। চিরতরে হারিয়ে যান স্বামী সোহেলও। শরীফা নিজে ও তার ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া বড় কন্যা বিবি কুলসুমা আক্তার মিম প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছেন মাটিচাপায়। তবে শরীফার কাছে সেই ক্ষতের চেয়ে স্বামী-সন্তান হারানোর ক্ষত ঢের গভীর।

স্বামী সোহেলের সঙ্গে এই ছবি কেবল ছবি হয়েই থাকবে। মায়ের কোলে আর ফিরবে না বিবি জান্নাত। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা

পাহাড় ধসের শব্দ শুনে শরীফা ও তার স্বজনদের উদ্ধার করেন জা সাজিয়া আক্তার সাজু। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে উঠে দেখি ওদের ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরও দেখি দরজা খোলে না। সাবাইকে ডেকে তিনজনে ভেঙেছি দরজা, ভেঙে দেখি ওরা সবাই মাটির নিচে।

‘তিনজনের পা দেখা যাচ্ছিল, ছোটটার কিছুই দেখা যায়নি। আমরা টেনে মিমকে বের করছি। সবাইকে ডাকতেছি, কেউ আসেনি।’

সাজিয়ার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর। বিয়ের পর থেকেই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে আসছেন। স্বামী-স্বজনদের রেলওয়েতে কর্মচারী হিসেবে চাকরির সুবাদে আরও আগে থেকেই ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

ধসের ওই স্থানে কয়েকদিন ধরে পাহাড় কেটে দেয়াল তৈরি করছেন খালেদ নামের রেলওয়ের এক কর্মচারী। সাজিয়াসহ স্থানীয়দের দাবি- পাহাড় কেটে ওই দেয়াল তৈরির কারণেই পাহাড় ধসে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সাজিয়া বলেন, “৮ থেকে ১০ দিন ধরে খালেদ মাটি কেটে দেয়াল তুলতেছিল। গতকালও মাটি কাটছে। আমরা জিজ্ঞেস করছি, ‘কাকা, দেয়াল কেন তোলেন? আমাদের মারার জন্য নাকি?’ সে বলে, ‘তোরা মরবি না, তোদের বাঁচানোর জন্যই দেয়াল তুলে দিচ্ছি।’ অনেকেই তাকে গালি দিছে, তাকে বলছে- ভাঙলে তার বিচার হবে। এখন বিচার হয়ে কী হবে?”

অভিযুক্ত খালেদ ঘটনার পরপর গা-ঢাকা দেয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওই এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় দখল করে দুটি কলোনি তৈরি করে খালেদ তা ভাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রাণহানির পর প্রশাসনের তোড়জোড়

রোববার ভোরে পাহাড় ধসে প্রাণহানির পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। তোড়জোড় শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পাহাড় ধসে প্রাণহানির খবরে তড়িঘড়ি করে ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় পাহাড়ে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। তবে পাহাড় ধসের পর ওই এলাকার ঠিক কতজন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার।

চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনের পেছনে আই ডব্লিউ কলোনিতে রোববার ভোরে পাহাড় ধসে চাপা পড়ে শরীফার ঘর। ছবি: নিউজবাংলা

২৬ পাহাড়ে লক্ষাধিক অবৈধ বসবাসকারি

ষোলশহরে পাহাড় ধসে নিহতদের স্বজনরা রেলওয়েতে চাকরির সুবাদে ওই পাহাড়ে বসবাসের কথা জানালেও মূলত পাহাড় দখল করে অবৈধভাবে বসতি গড়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নগরীর ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। তবে পরিবেশকর্মীদের দাবি, পাহাড়ে বসবাসকারীদের প্রকৃত সংখ্যা তার কয়েক গুণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছেন লক্ষাধিক মানুষ।

পাহাড় বাঁচাতে তিন উদ্যোগ চান পরিবেশ কর্মীরা

স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে যে কটি পাহাড় বেঁচে আছে সেসব রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনটি উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান।

এই পরিবেশ সংগঠক বলেন, ‘পাহাড় রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা তিনটি উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রথমত পাহাড় খালি না রেখে, পরীক্ষা করে সেসব কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার উপায় বের করা। দ্বিতীয়ত, ব্যাক্তিমালিকাধীন পাহাড়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট দেয়া যে তারা এটার বাইরে যেতে পারবে না। তৃতীয়ত, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের লোক নিয়ে একটা স্ট্রাইক ফোর্স গঠন করা। এই টিম সবসময় পাহাড় দেখভাল নিয়ে কাজ করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর