যে মিছিলে জনগণ নেই সেই মিছিল গণমিছিল হয় কী করে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি কালো মিছিল করছে কেন? তাদের কোন নেতা মারা গেছে? আন্দোলনের বারোটা বাজিয়ে এখন বিএনপি নেতারা নিজেদের অজান্তেই শোকের মিছিল করছে। আন্দোলনের পতাকা হলো লাল-সবুজ। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীকের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই?
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের মিছিল মানেই সারা শহরে মিছিল আর মিছিল। আপনারা মিছিল দেখবেন এক তারিখ এবং দুই তারিখে। আমরা বিজয়ের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, বিএনপির মতো শোকের কালো পতাকা নিয়ে নয়।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করছি। আজকে বিএনপি নেতাদের গলা শুকিয়ে গেছে। তাদের গলায় আর জোর নেই। তাদের সমাবেশে আস্তে আস্তে লোক কমে যাচ্ছে। আন্দোলনের মরা গাঙে জোয়ার আটকে গেছে। মরা গাঙে ঢেউ নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির বাজার ভাঙা হাটের মতো। ভাঙা হাঁট আর জমে না। ডিসেম্বরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসবেন, দেশ চালাবেন, তারেক জিয়া দেশে আসবে, কোথায় গেল এসব লাফালাফি? গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে তাদের লাফালাফি শেষ। তারপর পদযাত্রা থেকে শুরু করে বিএনপি এসব করেও আন্দোলন জমাতে পারেনি।
ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বিএনপি অনেক দূরে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দিনের বেলায় জাগরণের স্বপ্ন দেখছে৷ তারা দিবাস্বপ্ন দেখছে। এ দেশের শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষ যাকে ভালোবাসে, যাকে ভোট দিতে চায়, তারা (আওয়ামী লীগ) কেন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে? শেখ হাসিনা কেন বিদায় নেবেন? বিদেশি নেতারা শেখ হাসিনাকে মানবতার মা বলেছেন। তিনি অভিভাবকের মতো বর্ডার খুলে দিয়েছেন৷ আজকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের এখানে বসবাস করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বসে বসে স্বপ্ন দেখে, বিএনপি নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ছড়ায়। বিএনপিরও তো নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা দরকার। বিএনপির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় না কেন? সে প্রশ্ন আমরা করতে চাই। আজকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বড় বড় দেশে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের কেন ফিরিয়ে দিচ্ছে না, এটা কোন দেশের গণতন্ত্র?
রোহিঙ্গারা দেশের বোঝা হয়ে রয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ সাহায্য করে না, শুধু মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য মায়া কান্না কাটে। তারা তাদের দেশে অভিবাসীদের জায়গা দিতে পারে না। রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের দেশের অন্যতম সুন্দর জায়গা কক্সবাজারের জনজীবন আজ বিপন্নপ্রায়। আমাদের ট্যুরিজম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিদেশিরা মুখে সুন্দর সুন্দর বাণী উচ্চারণ করে, আমাদের নেত্রীর প্রশংসা করে, কিন্তু বাস্তবে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘তিনি বলেছেন- আওয়ামী লীগ নাকি দেশের জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি আসলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। আপনাদের আন্দোলনে তরুণ যুবসমাজের সম্পৃক্ততা নেই। কারণ আপনারা বলেছেন- ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। দেশের যুবসমাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে চায়। তারা দেশকে আর পিছনে যেতে দিতে চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব হতাশা নিয়ে ঘুরছেন। তিনি মিথ্যা আশা দিয়ে নেতাকর্মীদের দিয়ে আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাদের আন্দোলনও ব্যর্থ হয়েছে। আমি তাকে অনুরোধ জানাচ্ছি- আপনারা অনেক আন্দোলন করেছেন, এবার ঘরে ফিরে যান। আর যদি ষড়যন্ত্রের পায়তারা করেন, তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সেটা প্রতিহত করব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনসহ অন্যরা।