মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সহযোগীদের হাতে রোহিঙ্গাদের নির্বিচার হত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলেতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বাসিন্দারা।
৩২টি ক্যাম্পে এ সমাবেশ করেন রোহিঙ্গারা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, সে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সমাবেশের আয়োজন করে রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটি।
কমিটির নেতা মাস্টার সলিম উল্লাহ বলেন, ‘ফিরিয়ে না নেয়ার জন্য মিয়ানমার নানা ছলচাতুরি করছে, কিন্তু আমরা এভাবে এখানে পড়ে থাকতে পারি না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও তদবির করব।
‘তারপরও যদি ফেরত না নেয়, তাহলে ২০১৭ সালে যেভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলাম, ঠিক সেইভাবে সীমানা অতিক্রম করে আমরা নিজ দেশে ফেরত যাব।’
সমাবেশে বক্তব্যের সময় রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ জানান, যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চান তারা।
তিনি বলেন, ‘শরণার্থীবিষয়ক কমিশনও বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের দেশে ফেরত পাঠাতে, কিন্তু নানা কারণে থমকে আছে প্রত্যাবাসন।’
এদিকে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এখন বিপদে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা। ছয় বছরে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে মারা গেছে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা।
‘অপহরণ, ধর্ষণ ডাকাতি ও মানব পাচার মিলে মামলার সংখ্যা মোট তিন হাজার ২০০টি। এ পরিস্থিতিতে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিকল্প দেখছে না স্থানীয়রা।’
তিনি বলেন, ‘১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছেন, এ সংখ্যাটি পুরোনো হিসাব। নতুন হিসাব হচ্ছে, গত ছয় বছরে রোহিঙ্গা বেড়েছে আরও কয়েক লাখ। প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ৩২টি ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা চলছেন বাংলাদেশের মানবতায়। খাওয়া-দাওয়া-চিকিৎসা সবই ফ্রি।’
তিনি বলেন, ‘বিনিময় হিসেবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে দিচ্ছেন হত্যা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, পথেঘাটে ডাকাতি, মাদকের কারবার, মানবপাচার আর ধর্ষণ। অপরদিকে আরসাসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে।’
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা জানান, তারা শান্তি চান। রোহিঙ্গাদের কারণে নিয়মিত তাদের নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। পুলিশও জানে তাদের অপরাধের কথা, কিন্তু বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েও অপরাধীদের কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না তারা।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) জানায়, বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই চান নিজ দেশে ফিরে যেতে, তবে এ জন্য তারা চান মিয়ানমারের নাগরিকত্ব সনদ ও সেখানে নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রত্যাশা করছি দ্রুতই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে।’