বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে শেখ হাসিনাকে ‘স্পষ্ট বার্তা’ দেবে ভারত

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২১ আগস্ট, ২০২৩ ২৩:০০

বার্তা দুটি হলো- বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে চীন ও ইসলামপন্থী নেতাদের বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থী বেছে নিতে হবে।

জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী মাসে দিল্লি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও প্রার্থিতা বাছাই নিয়ে শেখ হাসিনাকে দুটি ‘স্পষ্ট বার্তা’ দিতে পারে ভারত।

সোমবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এ তথ্য।

বার্তা দুটি হলো- বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে চীন ও ইসলামপন্থী নেতাদের বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থী বেছে নিতে হবে।

প্রতিবেদনে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সূত্র দিয়ে বলা হয়, এই বার্তা দুটি বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্যের ইঙ্গিত বহন করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। ভারত এবং এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই বৈঠক হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু এবার এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় ঐকমত্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশ দুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনের জন্য দিল্লিতে এলে স্পষ্ট বার্তা দুটি জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিবেদনে ‍বলা হয়, যদিও শেখ হাসিনা বলে চলেছেন যে, তার সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনটিও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। নির্বাচন দুটি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান নিয়ে পশ্চিমাদের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কখনো কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি নয়াদিল্লি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ৯৬ শতাংশের বেশি আসন পেয়েছিল।

ধারণা করা হয়, ভারত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে ততক্ষণ চিন্তা করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ফলাফল হাসিনার পক্ষে থাকে। কারণ নয়াদিল্লি প্রতিবেশীদের মধ্যে শেখ হাসিনাকেই সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে মনে করে।

প্রতিবেদনটিতে ঢাকার একজন স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞের মতামত উল্লেখ করে লেখা হয়, শেখ হাসিনা যে এখনো ভারতের প্রথম পছন্দ তাতে খুব বেশি সন্দেহ নেই। তবে গত কয়েক বছরে এই সম্পর্কে কিছু কৌশলগত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সে কারণে সেসব উদ্বেগের সমাধান না করা পর্যন্ত ভারত এবার শেখ হাসিনাকে নিজ কৌশলে এগোতে দেবে, এমন সম্ভাবনা নেই।

ইসলামি সন্ত্রাসীদের দমন থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেয়াসহ আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের অনেক স্বার্থই রক্ষা করেছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে হাসিনা সরকারের আপাত নৈকট্য নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ফ্যাক্টরটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একই জায়গায় নিয়ে এসেছে।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় ও মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো হলো সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অর্থাৎ বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোতে চীনপন্থি এবং ইসলামপন্থিদের ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পরিস্থিতির আশু পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

উভয় পক্ষই একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শেখ হাসিনার সফরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়েছে যে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো দরকার নেই। যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে এমন কোনো বিধান নেই, যদিও তা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর প্রধান দাবি।

এ ছাড়া উভয় পক্ষ সম্পূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে যে, হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সমস্যার সমাধান করতে হবে, যা সাধারণ বাংলাদেশিদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা তাদের মার্কিন প্রতিপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রাথমিক এজেন্ডা তা বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় আনবে। তবে সেটি করলে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে ভারতের ওপর নিরাপত্তা হুমকি বৃদ্ধি পাবে।

আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে ভারতীয় পক্ষ জোর আপত্তি তুলে ধরেছে। কারণ ভারত জামায়াতে ইসলামীকে একটি মৌলবাদী সংগঠন বলেই মনে করে। নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি আরোপের আগে তাদের ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

প্রতিবেদনটিতে ঢাকার সূত্র থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবে। রাজনীতিতে অনাগ্রহী তরুণ প্রজন্ম জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে উৎসাহিত হবে। দলকানাদের বাদ দিয়ে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ওই সূত্র আরও বলে, এখন প্রশ্ন হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তে শেখ হাসিনার একরোখা যে মনোভাব, তাতে তিনি কোনো পরামর্শ গ্রহণ করবেন কি না।

এ বিভাগের আরো খবর