কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি মেঝেতে ফেলে মূল ঘটনা আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে গিয়ে জনরোষের কবলে পড়ে ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেই এমনটি করেছেন শফিকুল।
বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পালের ইন্ধনে বাজিতপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পৌর এলাকার মথুরাপুরে সরকারি জায়গা দখল করে একটি ঘর নির্মাণ করতে যান। স্থানীয় জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতারা এটা প্রতিহত করেন। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দখলবাজ এ চক্রটি স্থানীয় সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন ও পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে।
‘এমনকি তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি মেঝেতে ফেলে ছবি অবমাননা করা হয়েছে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালায়। শুধু তাই নয়, তারা এই বিষয়টিকে ইস্যু করে জেলা সদরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তার অনুসারী কেউ বিষোদগার করবেন না, করলে মনোনয়ন পাবেন না। নেত্রীর এ ঘোষণাকে পাত্তা না দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন নেতা সুব্রত পাল, শেখ নূরুন্নবী বাদল এবং তার অনুসারী কয়েকজন মাদকসেবী দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। এতে দলীয় নেতাদের মানহানি হচ্ছে এবং দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, শোকের মাসে এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য শাস্তি দিতে হবে। এ বিষয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ পাঠানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান, দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে অপপ্রচারকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বাজিতপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম যে জায়গায় ঘরটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সেটি সরকারি জায়গা। এখানে ঘর নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়।
‘ঘটনার কিছুক্ষণ পরই শফিক বলতে থাকেন, তার কার্যালয়ে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং আসবাবপত্র মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। এক পর্যায়ে তার কার্যালয়ের ভেতরের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয়ে মূল ঘটনা আড়াল করতেই এমন নাটক সাজিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।’
এদিকে শুক্রবার সকালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পালের নেতৃত্বে ঘর ভাঙা ও ছবি অবমাননার অভিযোগ এনে কিশোরগঞ্জ শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেখানে ঘরটি নির্মাণ করছিলাম, সেটি সরকারি জায়গা ঠিক আছে, তবে সরকার অধিগ্রহণের পূর্বে আমাদেরই ছিল।’
সরকার অধিগ্রহণের পরেও নিজের বলে দাবি করা যায় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্মাণের শুরুতে কেউ নিষেধ করলে ঘর ওঠাতাম না।’