গাইবান্ধায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে জায়গা-জমি হারিয়েছেন ভাঙারি ব্যবসায়ী আবদুর রহমান। বাধ্য হয়ে ২০২০ সালে পরিবার নিয়ে চলে আসেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের হায়দারনগর (আবিরেরপাড়া) গ্রামে। সেখানে চার শতক জমি কিনে বসবাস করছেন, কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি।
শুধু আবদুর রহমানই নয়, তার মতো ওই এলাকার অর্ধশত ভাঙারি ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবদুর রহমানের মতো গাইবান্ধার নদীভাঙন এলাকা থেকে গত তিন বছরে অর্ধশত ভাঙারি ব্যবসায়ী পরিবার এ এলাকায় জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। সবাই জমি কিনেন ওই এলাকার তোজাম্মেল হক ও জুলফিকার আলীর কাছ থেকে।
তোজাম্মেল হক ও জুলফিকার আলীর মধ্যে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে দুই সপ্তাহ আগে চলাচলের একমাত্র রাস্তায় সিমেন্টের খুঁটি, বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দেন তোজাম্মেল হক। ফলে ব্যবসায়ীদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভাঙারির কাজে ব্যবহৃত ভ্যান বের করতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয় তোজাম্মেল হক ও জুলফিকারের কাছ থেকে জমি কিনে বাড়ি করেছেন চরাঞ্চলের ৫০ পরিবার। জমি বিক্রির সময় যাতায়াতের জন্য রাস্তা দিয়েছেন তোজাম্মেল ও জুলফিকার। এ রাস্তার মালিকানা নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তোজাম্মেল হক রাস্তাটির মাঝে বেশ কয়েকটি জায়গায় সিমেন্টের খুঁটি পুতে দেন এবং নতুন আম গাছের চারা রোপণ করেন। এ ছাড়াও রাস্তার এক জায়গায় আম গাছের মোটা গুঁড়ি ফেলে এবং বাশেঁর খুঁটি গেঁড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, রাস্তাটি দিয়ে কোনোমতে একজন মানুষ হেঁটে যাতায়াত করতে পারবেন। এ কারণে ভাঙরি ব্যবসায়ীরা রাস্তা দিয়ে ভ্যান নিয়ে যেতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এর আগেও দুই-তিনবার রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন তোজাম্মেল। স্থানীয়ভাবে আলোচনার পর তা পরে খুলে দিয়েছিলেন।
স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা নদীভাঙন এলাকার মানুষ। জায়গা কেনার সময় মালিকরা রাস্তা বের করে দিয়েছে। এখন দুই মালিকের নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রাখছে।’
মর্জিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘আমরা সবাই ভাঙারি ব্যবসা করে দিন আনি দিন খাই। ১৫ দিন থেকে আমার বাড়িওয়ালা ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছে না। সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে আমাদের।’
এ ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী তোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যজন জুলফিকার আলী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় জায়গাগুলো বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেছি। জায়গা বিক্রির সময় আমরা রাস্তার জন্য জায়গা দিয়েছি। তোজাম্মেল হকও জায়গা বিক্রির সময় রাস্তার জায়গা ছেড়েছিলেন, কিন্তু তিনি এখন সেই জায়গাগুলো নিজের বলে দাবি করে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে সিংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য বলেছি। কোনোভাবেই মানুষের যাতায়াত বন্ধ করার বা ব্যাঘাত সৃষ্টি করার সুযোগ নেই।’
ঘোড়াঘাটের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং চলাচলের রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হবে।’