আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ একযোগে কাজ করে যাবে ভারত। দুই দেশ সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় পার করছে। এ সম্পর্ক অটুট রাখতে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় জনতা দল-বিজেপি যৌথভাবে কাজ করবে।
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের ভারত সফর শেষে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে বলে উল্লেখ করেন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক উঁচুতে। দ্বিপক্ষীয় সফরের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেছেন যে দুই দেশ সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় পার করছে।
‘বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে জানিয়ে দেশটি বলেছে, দুই বন্ধুপ্রতীম দল এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে।’
আব্দুর রাজ্জাক উল্লেখ করেন, বিজেপি জানিয়েছে যে চীন ও জামায়াতে ইসলামী ভারতের জন্য কোনো ঝুঁকি নয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভারতীয় জনতা পার্টির আমন্ত্রণে আওয়াামী লীগের ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে। দলটি ৬ আগস্ট দিল্লিতে পৌঁছায় এবং ৭ ও ৮ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং বিজেপি নেতৃবৃন্দ ও ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে।
৭ আগস্ট সকালে বিজেপি প্রেসিডেন্ট জগত প্রকাশ নাড্ডার সঙ্গে তার বাসভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, তার দল এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
এদিন দুপুরে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে দলটির জেনারেল সেক্রেটারি বিনোদ তড়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দল এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে।
বিকেলে ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে তার দপ্তরে বৈঠক হয়। বৈঠকে ড. জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দুই দেশের মধুর সম্পর্ক যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি উচ্চতায়।
৮ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টের লিডার অফ দ্য আপার হাউজ (রাজ্যসভা) ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ভারতে জি-২০ সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাজ্যসভায় বিজেপির দলনেতা পীযূষ গয়াল বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। খাদ্যশস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি ভারত সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।
একইসঙ্গে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে, সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা প্রস্তাবের অনুরোধ জানান।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ ফোরামের ভারতের কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে তিনি আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ভারত সফরকালে বিজেপির মহিলা সংগঠন মহিলা মোর্চা, যুব সংগঠন যুব মোর্চা ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করে। এছাড়া বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি আয়োাজিত ভোজসভায় যোগদান করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দিল্লির ওয়ার মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।