বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভূমি অধিগ্রহণ আতঙ্কে মেহেরপুরের মানুষ

  • প্রতিনিধি, মেহেরপুর   
  • ১০ আগস্ট, ২০২৩ ১৮:৩৫

জমির মালিকদের অভিযোগ, সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে উচ্চ মূল্যের জমির দাম নিম্ন শ্রেণির হিসেবে ধরছে মেহেরপুর ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। জমির দাম নির্ধারণে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম-নীতি। বাজার মূল্যের এক- চতুর্থাংশও দেয়া হচ্ছে না।

মেহেরপুর সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন‍্য ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় জমির মালিকরা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের বেড়াজালে সঠিক মূল্য না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।

অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন। ফলে মামলার বেড়াজালে থমকে যাচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও।

তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, আইন মেনেই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটাও দেখে ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ২২ জেলায় একটি করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নির্মাণ করবে সরকার। এর মধ্যে ২১ জেলায় কাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ রয়েছে মেহেরপুরের কাজ। একই জটিলতায় এখনও আলোর মুখ দেখেনি মুজিবনগর মডেল মসজিদের কাজ। অথচ দেশের সব উপজেলায় ইতোমধ্যে মডেল মসজিদ নির্মাণ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি মেহেরপুর জেলায় শুরু হয়েছে রেললাইন, মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, চেকপোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ। এসব কাজের জন্য চলতে ভূমি অধিগ্রহণ। কিন্তু এর প্রক্রিয়া নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয়রা। উন্নয়ন কাজ এখন বোঝায় পরিণত হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের কাছে।

জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ ধারায় উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসক যৌথ তালিকা প্রস্তুত করে শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তাদের অভিযোগ, সরকারি সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে উচ্চমূল্যের জমির দাম নিম্ন শ্রেণির জমি হিসেবে ধরছে মেহেরপুর ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। জমির মূল্য নির্ধারণে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম-নীতি। বাজার মূল্যের এক-চতুর্থাংশও দেয়া হচ্ছে না জমির মালিকদের। আবার যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ওই জমিকে দেখানো হচ্ছে পরিত্যক্ত হিসেবে।

জমির মালিকরা জেলা প্রশাসনের কাছে সুবিচার না পেয়ে আদালতের দারস্থ হচ্ছেন। ফলে মামলা জটিলতায় থমকে যাচ্ছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।

মুজিবনগরের তোয়াক্কন নেছা জানান, তাকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। প্রতিকার পেতে তিনি পরিবারের লোকজনকে নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেও মেলেনি কোনো সুরাহা।

মেহেরপুরের বামনপাড়া মৌজার জমির মালিক আশরাফুল হক জানান, তার একবিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার পাশের জমি বিক্রয় হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ টাকা শতক। অথচ, তার জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫৭ হাজার টাকা শতক। সরকার নিধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়েও কম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি আপত্তি দাখিলের জন্য মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে।

বন্দর গ্রামের মো. গাউছুল জানান, তাদের তিন শরিকের ১২ কাঠা জমি সরকার অধিগ্রহণ করলেও আজও কোনো টাকা-পয়সা দেয়া হয়নি। জমিতে লিচু গাছ ছিল, সেগুলোর দাম ধরা দেয়নি। সব শরিক মিলে বাধা দিলেও পুলিশ এসে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর করে কাজ করছে।

মেহেরপুরের সাবেক পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু জানান, তার ছেলের একমাত্র সম্বল বাড়ি করা জমিতে মুজিবনগর মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।

জমি অধিগ্রহণের নামে মেহেরপুরের ভূমি মালিকদের ওপর নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান বলেন, ‘আমি এ জেলাতে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যোগদান করেছি। ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন মেনেই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় সেই মৌজার এক বছরের ক্রয়-বিক্রয়ের গড় হিসাব অনুযায়ী। তারপরও কোনো ব্যক্তি সঠিক মূল্য না পেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমার কাছে দরখাস্ত দিলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর