মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনীতে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৫ সালের জুনে চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরুই করা যায়নি নির্মাণ কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে অর্থের যোগান নিশ্চিত না হওয়ায় এতদিন কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বিদেশি একটি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করায় দ্রুতই নির্মাণকাজ শুরু হবে।
জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় ২০১৬ সালে ৩৫০ মেগাওয়াটের কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে প্রায় আড়াইশো একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ওই জায়গায় ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি পরিবেশবান্ধব সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে আরপিসিএল। অন্যদিকে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) সূত্রে জানা যায়, ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন তারা। ২০২৩ সালে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়। ২০২৫ সালের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় তার নির্মাণ কাজই শুরু করা যায়নি। এদিকে বিভিন্ন জটিলতার পর প্রকল্পটিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে জার্মানির বিনিয়োগ ও উন্নয়ন ব্যাংক কেএফডব্লিউ (KFW)। দ্রুতই প্রকল্পটি নির্মাণকাজ শুরু হবে যা ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ভরাট এবং ভূমি উন্নয়নের যাবতীয় কাজ শেষ করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। প্রকল্পটি নদীর তীরে হওয়ায় নদীভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হয়েছে কংক্রিট ব্লক। প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণে কাজও শেষ হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের ৯ বছর পার হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সেখানে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছে এ জায়গাটি এখন ষোলআনী প্রজেক্ট নামে পরিচিত। শুনেছিলাম এখানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। কিছু লোক বলেছিল প্রকল্প এলাকার একপাশে একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে, কিন্তু আমরা সেরকম কিছুই দেখতে পাচ্ছি না’।
প্রকল্প এলাকায় ঘুরতে আসা নুরুল হক বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসি। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই জায়গাটি ষোলআনী সৈকত নামে পরিচিত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। অনেকদিন ধরে শুনছি এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে তবে শুধুমাত্র একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ছাড়া এখানে কিছুই নেই’।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া জানান, ‘প্রয়োজনীয় ফান্ড না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আসার কথা হচ্ছে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কেএফডব্লিউ (KFW) ৪২ মিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। স্বল্প সুদে পাওয়া এই ঋণ দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা দিবে সরকার। সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জমি পাওয়া। আমাদের জমি রেডি রয়েছে দ্রুতই আমরা সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব। ২০২৮ সালে আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা’।