রাজশাহী নগরীর পবা এলাকায় সুলতান আলী হত্যাকাণ্ডের চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আপাতদৃষ্টিতে ক্লুলেস হলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলেছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজায় হত্যাকারীরা। তবে পুলিশের তৎপরতায় বেরিয়ে এসেছে আসল ঘটনা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ২৮ বছর বয়সী সবুজ আলী, ২৮ বছর বয়সী সজল আহম্মেদ, ৪২ বছরের কাওসার আলী ও ২২ বছরের সুইটি খাতুন। চার আসামির একজন খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
থানা পুলিশ জানায়, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক নারীর সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় ওই নারীর স্বামীসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে সুলতানকে হত্যা করেন। গত ১ জুলাই হত্যার পর সুলতান আলীর মরদেহ চলন্ত ট্রাকের সামনে ফেলে দেয় আসামিরা।
ওইদিন দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে মহানগরীর পবা থানা পুলিশ নওহাটা-দুয়ারী সড়কে মধ্যবয়সী অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রেরণ করে। ডাক্তার পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মরদেহের প্যান্টের পকেটে কোভিড-১৯ টিকা কার্ড পাওয়া যায়। টিকা কার্ড দেখে জানা যায়, নিহতের নাম সুলতান আলী।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের কপালের বাম পাশে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হলে পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্ত করায়। ২২ জুলাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পারে সুলতানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর নিহত সুলতানের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর পরই মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ।
পরবর্তীতে পবা থানা পুলিশের ওই টিম গত ২৪ জুলাই রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত আসামি সজল ও তার স্ত্রী সুইটির রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করলে বুধবার খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি সজল।
জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, মৃত সুলতান গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। দুই মাস আগে মোবাইল ফোনে সজলের স্ত্রী সুইটির সঙ্গে সুলতানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সুলতান দেখার করার জন্য প্রায়ই সুইটিকে প্রস্তাব দিতেন। সুইটি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সুলতান সুইটির তিন বছরের বাচ্চার ক্ষতি করার হুমকি দেন।
সুইটি বিষয়টি তার স্বামী সজলকে জানালে সজল সুলতানকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সজল তার স্ত্রী সুইটির মাধ্যমে সুলতানকে রাজশাহীতে দেখা করার জন্য আসতে বলেন। গত ১ জুলাই সুলতান সুইটির সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহীতে আসেন। তখন সুইটি তাকে পবা ও তানোর থানার সীমান্তবর্তী নাইস গার্ডেনে নিয়ে যান। নাইস গার্ডেন তারা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা মোতাবেক সজল, তার বন্ধু সবুজ ও চাচা আনারুলের সহযোগিতায় সুলতানকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে নিয়ে নওহাটার দিকে নিয়ে যান।
এসময় আসামিরা তাকে মারপিট করেন এবং তার পরিবারের লোকজনদের আসার জন্য বলতে বলেন। এতে সুলতান রাজি না হলে দুপুর ৩টার দিকে পবা থানার বাগসারা বাজার পার হয়ে ফাঁকা জায়গায় অটোরিকশার ভেতর সুলতানের হাত-পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আসামীরা। পরে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজান তারা। সে মোতাবেক তারা রাস্তায় চলন্ত ট্রাক খুঁজতে থাকেন। এক সময় অপরদিক থেকে একটি ট্রাক আসতে দেখে তারা সুলতানের লাশ ট্রাকের সামনে ফেলে দেন। ফলে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সুলতানের মাথায় জখম হলে আসামীরা পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের সঙ্গে ইজি বাইকের দুর্ঘটনার কারণে সুলতান মারা গেছে বলে পবা থানা পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আরও আসামি জড়িত আছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।