বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অসময়ে শিম চাষে অধিক লাভবান কৃষকরা

  • সালাহউদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার    
  • ১ আগস্ট, ২০২৩ ১৩:০৪

ডেংগারবন গ্রামে প্রথম দিকে এই উপসী (হাইব্রিড নয়) শিম গাছ চাষাবাদ শুরু করেন আহসান হাবিব। তিনি বলেন, সোমবার সকালে বাজারে ১২০ টাকা কেজি দরে ১০০ কেজি বিক্রি করেছি। শুধু শিমই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই এই শিমের বীজ আমার কাছ থেকে কিনে নিয়ে গেছেন। এই বীজ অনেক ভালো। ফলন বেশি হয়, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের ডেংগারবন গ্রামে অসময়ে শিম চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। শিম মূলত শীত মৌসুমে চাষ হলেও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকৃবি১ জাতের গ্রীষ্মকালীন আগাম ফলন দেয়া শিমের চাষ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছেন তারা।

এ বছর প্রায় ২৫ জন কৃষক ৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে প্রায় ৮০ লাখ টাকা উপার্জন করবেন বলে ধারনা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। শুধু জমির মালিকরাই নয় এই শিম খেতে কাজ করে গ্রামের নারীরাও দৈনিক মজুরি পেয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন।শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.শহিদুল ইসলাম এর কাছ থেকে পাওয়া সিকৃবি১ জাতের এই শিমের বীজ মুলত গ্রীষ্মকালেই বেশি ফলন আসে। একটি গাছ লাগানোর পর প্রায় দুই বছর পর্যন্ত বাঁচে। একটি গাছ লাগানোর ৪০ দিনে ফুল ও ফল আসে ৫০ দিনের দিন বিক্রির উপযোগী হয়। এই শিম গাছ থেকে সহজে বীজ সংগ্রহ করা যায়।ডেংগারবন গ্রামে প্রথম দিকে এই উপসী (হাইব্রিড নয়) শিম গাছ চাষাবাদ শুরু করেন আহসান হাবিব।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের দিকে আমি কৃষি অফিস থেকে মাত্র ১২ টি শিমের বীজ পাই। এই ১২ টি বীজ বাড়ি আঙ্গিনায় লাগাই। সেখান থেকে গাছ বড় হয়ে ফলন হয়। আমি বীজ সংগ্রহ করে রাখি। পরবর্তীতে বড় জায়গা নিয়ে এই গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ শুরু করি। গত বছর আমার এক বিঘা জমিতে থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকার শিম বিক্রি করেছিলাম। যেখানে খরচ হয়েছিলো ১৮ হাজার টাকা মাত্র।

‘এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে শিম চাষ করছি। এই পর্যন্ত দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। যে শিম গাছে আছে তা আরো প্রায় তিন লাখ টাকা বিক্রি হবে । এবছর আমার খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। প্রতি কেজি শিম ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হয়।পাইকাররা বাড়ি থেকে নিয়ে যায় শিম, আবার অনেক সময় আমি আড়তে নিয়ে বিক্রি করে আসি।’আহসান হাবিব বলেন, সোমবার সকালে বাজারে ১২০ টাকা কেজি দরে ১০০ কেজি বিক্রি করেছি। শুধু শিমই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই এই শিমের বীজ আমার কাছ থেকে কিনে নিয়ে গেছেন। এই বীজ অনেক ভালো। ফলন বেশী হয়, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম।তিনি আরও বলেন, এই গ্রামের প্রায় ২৫ জন কৃষক এখন এই শিম চাষের সাথে যুক্ত আছেন। মাচা করে তারা সবাই শিম চাষ করছে। শীত মৌসুমে এই শিমের দাম ২০-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। তাই আমরা গ্রীষ্মকালে এই সবজির চাষ করি। এই সময়ে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।

গ্রামের আরেক শিম চাষি নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমি ২০ শতক জায়গায় এইবার শিমের চাষ করেছি। আমার বাড়ির পাশের আহসান হাবিব চাচা প্রথম দিকে এই শিমের চাষ শুরু করেন। তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আমি নিজেও চাষাবাদ করি। এই শিম গাছে প্রচুর শিম ধরে। এ বছর অনেক শিম বিক্রি করেছি। আগামী বছর শিমের জন্য আরো জায়গা বড় করবো। এটি খুবই লাভজনক।’শিমের জমিতে কাজ করতে আসা ইউনুস মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের জমি নেই। আমি অন্যের শিমের জমিতে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করি। এ দিয়ে আমার সংসার চলে। আমার মতো অনেকেই এখন এই গ্রামে শিমের জমিতে কাজ করে টাকা উপার্জন করছে। আগামী বছর আমি নিজেও এই শিমের চাষ করবো। হয়তো বাগি জমি নিয়ে সেই চাষ করবো।’শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিকৃবি ১ শিমের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করি। এই বীজটি গ্রীষ্মকালীন শিমের। আমরা কৃষকদের এই গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের উপরে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করি। শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে এই গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষাবাদ হয়েছে। বাজারে এই সময়ে শিম না থাকায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আশা করা যায় মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করে কৃষকরা ৮০-৮৫ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবে। এখানে খরচ অনেক কম। এই সিকৃবি ১ জাতের বীজে রোগবালাইও কম। ’মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে জেলা সদর উপজেলা ও শ্রীমঙ্গলে প্রদর্শনী আকারে এ আগাম শিমের চাষ করেছি। এতে ৩টা করে বিজ (পুতলা) ও ৫-৭টা বীজ থাকে। তাছাড়া অনেক কৃষক আগে শিম বীজ সংগ্রহ করেছে। তারা সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে এখন নিজের কৃষি জমিতে ভালো চাষাবাদ করছে। আমরা আগামীতে অন্য উপজেলাগুলোতেও পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করবো।’তিনি আরও বলেন, কৃষক জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রানীবাজার নামক এলাকার কনক লাল সিংহ তিনি নিজে সিকৃবি১ জাতের এই শিমের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছে। আমায় তিনি নিজে দাওয়াত করেও খাইয়েছেন। এ জাতের বীজ চাষ করে কৃষক লাভবানই হবে। কারণ এই সিকৃবি ১ জাতের বীজে রোগবালাইও কম। ’

এ বিভাগের আরো খবর