ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহতের ঘটনায় বাসের চালক মোহন খানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ঢাকার আশুলিয়া থেকে বুধবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, আঞ্চলিক মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ‘বাশার-স্মৃতি’ নামের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ওই বাসে ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ যাত্রীর, কিন্তু বাসে যাত্রী ছিল অনেক বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ ছাড়া বাসের চালক মোহন খানের হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর অনুমোদন ছিল না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তার ভাষ্য, গত ২২ জুলাই সকালে পিরোজপুর-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা বাশার-স্মৃতি নামের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে পুকুরে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৩৮ যাত্রী আহত হন। এ দুর্ঘটনায় এলাকার মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব চালক ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
কমান্ডার মঈন বলেন, নজরদারির ধারাবাহিকতায় র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮-এর আভিযানিক দল বুধবার ভোরে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে দুর্ঘটনার শিকার বাসের চালক মোহন খানকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে বাসের সুপারভাইজার মো ফয়সাল ওরফে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গত ২২ জুলাই বাশার-স্মৃতি পরিবহনের বাসটি সকাল ৯টায় ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যাত্রা শুরু করে। ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্টপেজ থেকে বাসটিতে আরও যাত্রী ওঠানো হয়। বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকেন চালক। পরবর্তী সময়ে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় পৌঁছালে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের পুকুরে গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। ওই সময় ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ বাসের ভেতর থেকে ৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ১৭ জনকে মৃত বলে জানান। অবশিষ্ট ৩৮ যাত্রীকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মোহন তিন বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তার হালকা যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্স ছিল না। এ ছাড়াও বাশার-স্মৃতি পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৬৫৪৯, যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪৫) ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকলেও গাড়ির ফিটনেস ভালো ছিল না। মিটার নষ্ট ছিল।’
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর চালক কৌশলে পালিয়ে ঝালকাঠি, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় তার আত্মীয়দের বাসায় আত্মগোপনে থাকেন। ওই অবস্থায় আশুলিয়া থেকে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।