বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আঁশবিহীন পাটশাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন ময়মনসিংহের চাষিরা। এতে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শাক বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
কৃষকরা জানান, জেলার প্রতিটি উপজেলায় এ জাতের পাটশাকের চাহিদা রয়েছে। এ কারণে আগ্রহ নিয়ে চাষ করেন কৃষকরা। খরচের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় অন্যান্য সফল চাষের পাশাপাশি অনেকে পাটশাক চাষে ঝুঁকছেন।
সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে বিনাপাটশাক-১ জাত চাষ করেছিলাম। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।
‘পরে নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে এক আঁটি শাক পাঁচ টাকা করে মোট ২৮ হাজার টাকার শাক স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছি।’
জয়নাল আবেদীন নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে এ জাতের শাক চাষ করি। শাকগুলোর স্বাদ খুব ভালো। অনেক ক্রেতা জমিতে এসে কিনে নেন, আবার বাজারে নিয়েও বিক্রি করি।
‘খরচের তুলনায় কয়েক গুণ লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক বিভিন্ন সবজি চাষের পাশাপাশি পাটশাক চাষ করছেন।’
নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে দেখা যায়, পাটশাক নিয়ে বসে আছেন অনেক বিক্রেতা। এক আঁটি পাঁচ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারাও দামাদামি না করে কিনে নিচ্ছেন।
আসাদুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি পাটশাক খুব পছন্দ করি। তাই বাজারে আসলে কিনে নিই। দাম কম হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যাও বেশি।
‘এ ছাড়া সময়ের ব্যবধানে অনেক সবজির দাম বাড়লেও কয়েক বছর ধরে এক আঁটি পাঁচ টাকা দিয়েই কিনছি।’
কী বলছেন গবেষণা সংশ্লিষ্টরা
বিনার মহাপরিচালক ও বিনাপাটশাক-১ এর গবেষক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, উন্নত এ জাতটি উদ্ভাবন করতে দীর্ঘ সাত বছর গবেষণা করতে হয়েছে। জাতটিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে ২০০৩ সালে ছাড়পত্র দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড। বর্তমানে এ জাতের সুফল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপকভাবে চাষ বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, বিনাপাটশাক-১ নামের এ জাতটি থেকে কোনো প্রকার আঁশ পাওয়া যায় না। গাছ খুবই খাটো। অন্যান্য জাতের চেয়ে পাতার সংখ্যাও বেশি। বীজ বপনের মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে পাটশাক তোলা যায়। এ জাতের পাটশাকের ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩ দশমিক ৫ টন, যা অন্যান্য জাতের চেয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি।
জাতটি কৃষকরা ভালোভাবে গ্রহণ করায় ময়মনসিংহসহ সারা দেশে চাষ করা হচ্ছে।
গবেষক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই গাছের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হলেই শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। এ জাতটি একবার চাষ করে দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত শাকের অভাব পূরণ করা যায়।’
জাতটি চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করতে হবে, তবে বৃষ্টির সময় বপন না করাই ভালো।’
বিনার মহাপরিচালক ও বিনাপাটশাক-১-এর গবেষক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘এ জাতের পাটশাকে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই জাতটি চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হয়েছে। জাতটি কৃষক পর্যায়ে আরও ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চলছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় চাষ হচ্ছে বিনাপাটশাক-১। এ বছর জেলায় ১৪০ হেক্টরের বেশি জমিতে জাতটির চাষ হয়েছে। পাটশাকের আবাদ আরও বাড়াতে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
এ ছাড়া নতুন কোনো চাষি পাটশাকে আগ্রহী হলে প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিনাপাটশাক-১ নামের উন্নত জাতটি উদ্ভাবন করে বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. কে এম শামসুজ্জামান। এ ছাড়া সহযোগী গবেষক ছিলেন বিনার প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিসের পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ ও বিনার বর্তমান মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম।