ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা। এ বিষয়ে মিয়ানমারকে জোর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা চেয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজারের উখিয়ায় বুধবার দিনব্যাপী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কাছে এই দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
উজরা জেয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে উখিয়ার ক্যাম্প ৯-এ এসে পৌঁছায়। সেখানে তাদেরকে স্বাগত জানান শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রতিনিধি দলের এই আগমনকে ঘিরে ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বসানো হয় চেকপোস্ট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কাউকে ঘুরাফেরা করা বা বাইরে যেতে দেয়নি এপিবিএন।
পরিদর্শনের শুরুতেই জাতিসংঘ পরিচালিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উজরা জেয়া। এরপর হেঁটে ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জীবনযাপনের চিত্র প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এরপর একে একে পুষ্টি কেন্দ্র, ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম ঘুরে দেখে প্রতিনিধি দলটি।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তারপর ক্যাম্প ১১-এর কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন উজরা জেয়ার কাছে।
উখিয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন উজরা জেয়া। ছবি: নিউজবাংলা
এদিকে প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পে পৌঁছানোর পরপরই রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা তাদের পিছু নেন। দীর্ঘ সময় পর উজরা জেয়াকে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন তারা।
দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলেননি উজরা জেয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ৮ জন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। এজন্য মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা চায় সাধারণ রোহিঙ্গারা। তাদের ভূমিকা আমাদের নিজ দেশে ফেরাতে পারে। সে উদ্দেশ্যে একটি চিঠি হস্তান্তর করেছি। আমি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এসব কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেছি।’
জোবায়ের আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে অন্য জাতিগুলো যেভাবে জীবন-যাপন করছে আমরাও সেভাবে থাকতে চাই। আমাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জমি-জমা ফেরত পেতে চাই। স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে মিয়ানমার আমাদেরকে ক্যাম্পে রাখতে চায়। সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে যুক্তরাষ্ট্রের জোর ভূমিকা প্রয়োজন।’
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি আমির জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের এই সফরকে কেন্দ্র করে ক্যাম্প জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।’
প্রসঙ্গত, উজরা জেয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছে। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তাদের এই সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, ১১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি ঢাকা সফর করবে। তাদের এই সফরে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা হবে। তবে বাংলাদেশ সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সম্পর্কিত বিষয় এবং মানব পাচারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হতে পারে।