সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তির দাবিতে বিএনপি ঘোষিত এক দফা দাবির বিপরীতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এক দফার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সংবিধানসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং তিনি ছাড়া (শেখ হাসিনা) কোনো নির্বাচন হবে না।’
বুধবার রাজধানীর বায়তুল মুকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির এক দফা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদেরও এক দফা- শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই হবে, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন।’
বায়তুল মুকাররম দক্ষিণ গেটে বুধবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশের একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির এক দফা নয়াপল্টনের কাদাপানিতে আটকে গেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তাদের এক দফার জবাবে আমাদেরও এক দফা। আর সেটি হলো সংবিধানসম্মত নির্বাচন। সংবিধানের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বাধা দেবো না। কাউকে আক্রমণ করতে যাবো না। বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। আমাদেরও লক্ষ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে আমরা তাদের প্রতিহত করবো।’
বিএনপি অনেক ষড়যন্ত্র করেছে অভিযোগ করে কাদের বলেন, ‘তারা আগেও কাঁথা-বালিশ নিয়ে অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছে। তারা ডিসেম্বরের স্বপ্ন দেখে গরুর হাটে গিয়েছিল। এখন আরেক স্বপ্ন দেখছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই স্বপ্ন নয়াপল্টনের বৃষ্টির কাদাপানিতে আটকে গেছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে নির্বাচন পর্যন্ত। মাঠ ছাড়বেন না। যখনই ডাক দেবো, শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে চলে আসবেন। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করবেন না।
‘বাংলাদেশে আমাদের মায়ের কোল যারা খালি করেছে, যারা আমার দেশের অগণিত মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে আপস নয়। যাদের হাতে ১৫ আগস্টের রক্ত তাদের সঙ্গে আপস করতে পারি না। একাত্তরের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, জয় বাংলা স্লোগান, ৭ মার্চের চেতনা প্রশ্নে আমরা আপস করতে পারি না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যাকে ভালোবাসে, জনগণ যে নেত্রীর সততাকে পছন্দ করে, যে নেত্রীর উন্নয়নকে পছন্দ করে, যিনি রাত জেগে মানুষের কথা ভাবেন- এমন নেত্রীকে আমরা হারাতে চাই না।
‘বিএনপি জানে নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা তাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আজ সেজন্য তারা শেখ হাসিনাকে হিংসা করে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল, একদিনে একশ’ সেতু উদ্বোধন তারা চায়নি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তাদের পছন্দ হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন যাদের পছন্দ হয় না তারা শেখ হাসিনাকে পছন্দ করবে না।
‘শেখ হাসিনার অপরাধ যে তিনি দেশের উন্নয়ন করেছে, জাতিকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাদের কাছে আজ এসবই শেখ হাসিনার অপরাধ।’
সমাবেশে বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অনেক দয়া দেখিয়েছেন। ২১ আগস্ট তাকে হত্যার জন্য হামলা করার পরও কোকোর মৃত্যুর পর তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দয়ালু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু দরজা বন্ধ। বাইরের গেট বন্ধ। শেখ হাসিনাকে তারা ঢুকতে দেয়নি।
দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অপশক্তি, গণতন্ত্রের এই শত্রুদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আপস করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে তখন কোনো অপশক্তি সামনে দাঁড়াবে পারবে না।
‘শোকের মাসে কর্মসূচির পাশাপাশি গণসংযোগ চালাবেন। তবে শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার ছবি ছাড়া আর কারও কোনো ছবি দিয়ে প্রচার চালাবেন না।’
কাদের বলেন, ‘ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন অনুপ্রেরণা। বিশ্বব্যাংকের সভাপতি তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার অসামান্য নেতৃত্বের প্রশংসা করে। বাংলাদেশের কিছু মানুষ এটা সহ্য করতে পারে না। শেখ হাসিনার প্রশংসায় তাদের গা জ্বালা করে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা মানে উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন। ৪৮ বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো এমন সৎ নেতৃত্ব, সৎ প্রধানমন্ত্রী, সাহসী নেতৃত্ব, দক্ষ প্রশাসক আমরা পাইনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে তারাই হারাতে চায়, যারা জানে ভোট করলে তার সঙ্গে পেরে উঠবে না। এজন্যই তার ওপর এত ক্ষোভ।’
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এমন মঞ্চ দেখতে চাইনি। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এতো নেতা কেন? একটা মিটিংয়ে এতো বক্তা কেন বক্তব্য দেবেন? এই মিটিংয়ে এরা করবেন, ওই মিটিংয়ে ওরা দেবেন- এভাবে করবেন। সব নেতাকে বক্তব্য দিতে হবে আর সামনের নেতাকর্মী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে চলে যাবে এটা হয় না।’