বিএনপির এক দফার আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, ‘বিএনপির এক দফা বেলুনের মতো ফুটে যাবে। জনগণের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ দলটি গণতন্ত্রের চর্চা করে না।’
বুধবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে এভাবে সমালোচনা করেন দলটির নেতারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
সমাবেশে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নৈরাজ্যের চেষ্টা ভেস্তে গেছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। অথচ জিয়াউর রহমান যখন মারা গেল, তখন দেশে কারফিউ ছিল।
‘সামনে আমাদের লক্ষ্য আরও উন্নয়ন। পরিষ্কার বলতে চাই, তাদের পরাজিত করেই আমরা এগিয়ে যাব।’
এসময় ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছে যা জনতার উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবে। খুনি জিয়ার দল বিএনপি। তারা দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে চায়। বিদেশিদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে তারা। বিদেশি বন্ধুদের বলি, আপনারা উন্নয়ন সহযোগী, সে কারণে সম্মান করি।
‘রক্তে ভেজা আমাদের দেশের সংবিধান। সংবিধান মোতাবেকই নির্বাচন হবে। অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না। আমরা সপ্তম নৌবিহার প্রতিরোধ করেছিলাম। আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেব। নির্বাচনে আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নানক বলেন, ‘বিএনপির চেহারা জনগণ জানে। এক দফা! কীসের দফা? এ দেশের অগ্রগতি আসলে তাদের সহ্য হয় না। ওই হত্যাকারীর দল, ওই ঘাতকেরা আবারও নেমেছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য। যে হাত আগুন দিবে, সে হাত ভেঙে দিব। এ জবাব দেয়ার জন্য আজকের এই শান্তি সমাবেশ।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম বিএনপিকে ‘রাজনৈতিক অপশক্তি’ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘তারা বারবার এক দফা দেয়। ১৩, ১৪, ১৯ ও ২২ সালের ডিসেম্বরেও এক দফা দিয়েছে। তাদের এক দফা বেলুনের মতো ফুটে যায়। সে সময় তাদের এক দফার আন্দোলন মাঠে মারা গিয়েছিল। এবারও তাদের এক দফা ফুটে যাবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি পাগলা কুকুরের মতো হয়ে গেছে। তারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গেও বৈঠক করে। কোনো সন্ত্রাসী, নৈরাজ্যকারী ও ইসরায়েলের এজেন্টদের আমরা ক্ষমতায় আসতো দেব না।’
অনুষ্ঠানে হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে, তখন বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। বিএনপি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা কী করেছিল? খালেদা জিয়ার আমলে কীভাবে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তা দেশবাসী জানে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। বিএনপি কয়- এক দফা, আমরা এই সমাবেশ থেকে ওদের ‘নেই দফা’ বানিয়ে দিলাম। বিএনপি আজকেই হেরে গেছে...।’
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা চেয়ে বিএনপির ‘এক দফা’ ঘোষণার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের এক দফা, (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।