ঈদের তৃতীয় দিনের সকালে হালকা বৃষ্টির পর রোদের দেখা পেয়েছিলেন রাজধানী ঢাকার মানুষ। কিন্তু দুপুর ২টার পর আবার মন খারাপ হয় আকাশের। শুরু হয় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।
পরে বেলা ৩টার দিকে শুরু হওয়া ঝুম বৃষ্টি চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। এতে পানির নিচে চলে যায় রাজধানীর অনেক সড়ক। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি জমে। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল, বিকল হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ কিছু গাড়ির ইঞ্জিন। দুর্ভোগে পড়েন ঢাকার বাসিন্দা ও যাত্রীরা।
রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার সড়কে শনিবার জমে বৃষ্টির পানি। এতে স্কুটার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন এক চালক। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
আবহাওয়ায় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
এ বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। রাত ৮টার দিকেও কিছু সড়কে পানি ছিল।
সরেজমিন রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মিরপুর রোড, পান্থপথ, কাকরাইল, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, দক্ষিণখান, তেজগাঁও, বংশাল, নাজিরাবাজার, মুকিমবাজার, গোপীবাগ, মোহাম্মদপুর, বসিলা, নাখালপাড়া, হাতিরঝিল, মধুবাগ, আদাবর, সাতরাস্তা, গ্রিনরোড, মগবাজার ও পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রোববারও রাজধানীতে ভারী বর্ষণ হবে।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার খুব বৃষ্টি থাকবে। ঢাকাতে ভারী বৃষ্টি হবে। সব থেকে বৃষ্টি বেশি থাকবে সিলেটে।’
জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি
মিরপুরের বাসিন্দা বারনার্ড রক্সি রয় রাত ১০টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে সকালে বাসা থেকে ফার্মগেট এসেছিলাম। বৃষ্টির কারণে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাসায় ফিরতে পারি নাই। মাত্র বাসায় যাচ্ছি। কারণ বিজয় সরণির ওখানে তখন হাটু সমান পানি ছিল। ছোট ছোট বাচ্চারা বিজয় সরণিতে তখন সাঁতার কাটছিল। বিজয় স্মরণীর পাশে ইয়ামির গেটের ভেতরে প্রায় পানি চলে এসেছিল। একটা গাড়িকে দেখলাম ভাসছিল।’
বৃষ্টির পানির নিচে সড়ক। বোঝার উপায় নেই খানাখন্দ। এ অবস্থায় যাত্রী নিয়ে চলাচলে জুবুথুবু রিকশাচালক। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
এদিকে ঈদের আমেজের সঙ্গে জলাবদ্ধতা যোগ হওয়ায় বিভিন্ন যানের ভাড়াও চাওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো।
গ্রিনরোডের বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, ‘বিকেলের বৃষ্টিতে গ্রীন রোডে হাটু সমান পানি ছিল। ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে বিপদে পড়েছিলাম। রাস্তায় পানি আর পানি। রিকশা ভাড়া দিগুণ দিয়ে ওষুধ কিনে আনতে হয়েছে।’
মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিকেলে সাত রাস্তা থেকে সেগুনবাগিচা আসতে গিয়ে দেখলাম পথের মধ্যে অসংখ্য গাড়ি ইঞ্জিন বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যে সিএনজিতে এসেছি সেটাও নষ্ট হয়েছিল।’
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।