রাজধানীর বেসরকারি ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যাওয়া এক কিশোরের বাবা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে সোমবার এই হত্যা মামলা করেন মারা যাওয়া ১৭ বছর বয়সী তাহসিন হোসেইনের বাবা মনির হোসেন।
এদিন ওই ঘটনায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে অভিযোগ দেন তিনি। পরে আদালত ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেয়।
মামলায় ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এম এ শামীমের সঙ্গে আরও আসামি করা হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ, সহকারী সার্জন ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ, ডা. কনক ও হাসপাতালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. শাহজাহানকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ সজীব। তিনি বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ হিসেবে নয়, সরাসরি হত্যা মামলা হিসেবে নিতে বলেছেন বিচারক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৭ বছরের তাহসিন কিছু দিন ধরে অসুস্থ বোধ করায় গত ২৭ মার্চ তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের ডা. সাইফুল্লাহকে দেখানো হয়। তিনি তাৎক্ষণিক তার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন এবং জানান রোগীর অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে পেটে ব্যথা এবং মলত্যাগ করতে পারছে না। পর দিনই তাহসিনের অস্ত্রোপচার হয়।
এতে বলা হয়, কিন্তু এরপর তাহসিনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাকসুদ বাদীকে জানান অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। রোগীকে সুস্থ করতে হলে আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। এরপর ৬ এপ্রিল দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করেন ডা. সাইফুল্লাহ। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পরেও রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা চলার পর গত ২৩ জুন রোগীর মৃত্যু হয়। তিন মাসে তাকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ২৭ লাখ টাকা বিল করে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে সন্তানের মরদেহ গ্রহণ করে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
মনির হোসেন বলেন, ‘আমি ডা. সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করছি আমার ছেলের সমস্যা কী? কিন্তু তিনি কোনোবারই সঠিক করে কিছু বলতে পারেননি। অথচ দুইবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি যে আমার ছেলের ভুল চিকিৎসা করেছেন, তা এক শ ভাগ নিশ্চিত। এ সময়ে আমার ছেলেকে ১৪৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আমি প্রথম অস্ত্রোপচারের পর এখান থেকে রিলিজ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্রও দেয়নি।’
ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার নামে ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা আমার ছেলেকে তিলে তিলে হত্যা করেছেন। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।’
সম্প্রতি রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক তরুণীর অস্ত্রোপচারকালে নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আঁখিও। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা সাহা একে অন্যকে দোষারোপ করেছে।
স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার অভিযোগ এনে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন হাসপাতালটির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে মামলা করেছেন। একই অভিযোগ এনেছেন ডা. সংযুক্তার নামেও।