ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশু জবাই ও মাংস বানানোর কাজে যোগ দিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেহেরপুরের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে শুরু করেছেন।
প্রতি বছর কোরবানি ঈদের এক থেকে দুই দিন আগে পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা ঢাকায় যান। অনেকে কসাই ঢাকায় থাকা আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে আগেভাগেই ঠিক করে নেন কাদের গরু জবাই করবেন ও মাংস কাটবেন। এভাবে দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে এক ধরনের যোগাযোগ গড়ে উঠেছে তাদের।
কসাইরা জানান, মেহেরপুর জেলা থেকে পাঁচ শতাধিক পেশাদার ও মৌসুমি কসাই ঢাকায় কাজ করেন।
এরই মধ্যে অনেকেই কোরবানির হাটে নেয়া গরুর গাড়িতে করে, আবার কেউ কেউ সড়ক, রেলপথে ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় যাচ্ছেন।
কসাই জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে একটা বড় ছাগল জবাই করে এক হাজার টাকা ও গরু জবাই করে পাই দুই হাজার টাকার মতো। অথচ সেই কাজ ঢাকায় গিয়ে করলে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যায়, সঙ্গে পাওয়া যায় সম্মানও। আবার গ্রামে কাজ করে অনেক সময় ঠিকমত টাকাও পাওয়া যায় না।’
গাংনীর আমতৈল গ্রামের জালাল কসাই জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে ঢাকায় যান তিনি। সঙ্গে রাখেন চারজন সহকারী। পশু ক্রয়ের অর্থের পরিমাণভেদে মাংস কাটার কাজ করা হয়। যে টাকায় পশুটি কেনা হয়েছে, তার প্রতি হাজারে ১০০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করে রেট ধরা হয়। ঈদের দিন ৫ থেকে ৬টি পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারেন তারা। কাজ শেষে ঈদের দিন রাতে কিংবা পরদিন শহর ছাড়েন।
নওদাপাড়া গ্রামের মৌসুমি কসাই বকুল হোসেন জানান, মূলত তারা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ঢাকায় থাকা আত্মীয় বা পরিচিতদের কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য প্রতিবার যান। এতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ যেমন রক্ষা হয়, তেমনই মোটা অঙ্কের বকশিশের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণ মাংসও পেয়ে থাকেন।
সত্তর বছর বয়সী কসাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে কসাইয়ের কাজ করেছি। বয়স হয়েছে এখন তেমন একটা কাজ করতে পারিনা, আবার করিও না। বতর্মানে আমার ছেলে কসাইয়ের কাজ করে। সে ছয়টি গরু নিয়ে ঢাকায় যাবে। গরু বিক্রি শেষে আবার কসাইয়ের কাজ সেরে বাড়ি ফিরবে।’
ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, যারা মাংস কাটার কাজে ঢাকায় যাচ্ছেন তাদেরকে ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। কারণ তাদের কাছে মাংস কাটার ধারালো ও ভারি অস্ত্র থাকবে।
পথিমধ্যে কোনো অসুবিধা হলে সেটিও দেখা হবে বলে জানান তিনি।