দায়িত্ব পাওয়ার ছয়মাস পার করেছে সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটির এক-চতুর্থাংশ সময় পার হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি এই দুই নেতা।
যদিও দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্রলীগের একাধিক প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি সম্পন্ন করার জন্য একাধিকবার তাগাদা দিয়েছেন।
কমিটি কবে হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের কমিটি গঠনের সকল কাজ শেষ। প্রথাগত কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হবে। বলা যায়, যেকোনো সময়ই ঘোষণা হতে পারে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।’
ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৩ মে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার নয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানি।
এর আগের কমিটির নেতৃত্বে থাকা সাইফুর রহমান সোহাগ ও জাকির হোসাইন দায়িত্ব পাওয়ার সাত মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল।
সাদ্দাম-ইনান দায়িত্বে আসার পর ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছিলেন, বর্তমান ছাত্রলীগ হবে স্মার্ট ছাত্রলীগ। সেই হিসেবে ছাত্রলীগের কর্মীরা ধারণা করেছেন, বিগত কমিটিগুলোর চেয়ে অর্ধেক সময়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবে ছাত্রলীগের নতুন এই নেতৃত্ব। কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর দায়িত্ব পাওয়ার পর সাদ্দাম হোসাইন আর শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের ছয় মাস পার হয়েছে গত ২০ জুন।
ছাত্রলীগকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথম তাগাদা দেন গত ৬ জানুয়ারি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হওয়া ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি করবেন প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি। অনেক কর্মী আশা নিয়ে বসে আছেন। বাকি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বেশি সময় যেন না নেয়া হয়। আমাদের আর দেরি করার সুযোগ নেই। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’
এরপর ২২ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায়ও ওবায়দুল কাদের দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগাদা দেন।
ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে, প্রাক্তন ছাত্রলীগ হিসেবে আমাদের লজ্জা লাগে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অপকর্মে জড়িত ছেলে-মেয়েদের রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’
সেদিন তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগে ভালো ছেলে-মেয়েরা থাকলে আরও ভালো ছেলে-মেয়েরা আকর্ষিত হবে। যারা ছিনতাই করে, চাঁদাবাজি করে, সিট বাণিজ্য করে, সন্ত্রাসী কাজকর্ম করে- তাদেরকে আমাদের দরকার নাই। তাদের বের করে দাও। এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। সততার সাথে কাজ করা স্মার্ট কর্মী চাই।’
এরপর সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিলও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলী ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথ সভা শেষে ভিডিও কলে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
এদিকে গত ১১ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আকার অপরিবর্তিত রেখেই নতুন করে আটটি পদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সেক্ষেত্রে কমে যেতে পারে সদস্য ও সহ-সম্পাদক থেকে আটটি পদ।
ছাত্রলীগের নতুন পদগুলো হলো- অটিজম বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রী ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সম্পাদক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক।