বাংলাদেশ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক বিবৃতিকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম।
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে পত্রিকায় দেখলাম অ্যামনেস্টি ইান্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে- আমাদের দেশে যারা র্যাবে কাজ করবে কিংবা যদি কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে যুক্ত থাকে, তাদেরকে যেন স্ক্রিনিং করা হয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেয়া হয়।
‘আমরা অ্যামনেস্টিকে চিনি। তারেক রহমানের বেয়াইন আইরিন খান অ্যামনেস্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এখনো অ্যামনেস্টির সাথে যুক্ত আছেন। তিনি তারেক রহমানের বউয়ের চাচাতো বোন। যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার শুরু হলো, তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল এই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অথচ ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যখন বিএনপি-জামাত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিল, তখন সেটার বিরুদ্ধে কোনো বিবৃতি তারা দেয়নি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এগুলোর বিবৃতি কিভাবে হয়, কোথায় ড্রাফট হয়, আর কিসের বিনিময়ে এদের বিবৃতি আসে সেটা আমরা জানি। ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো যেভাবে মানুষ শিকার করা হয়, তখন ইসরাইলের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয় না, অথচ যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বিবৃতি দেয়, আমাদের এসব বিষয় নিয়ে বিবৃতি দেয়ার নৈতিক অধিকার তাদের নেই।’
‘এই দুটি সংগঠন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই বিবৃতির কোন মূল্য নেই। সুতরাং, এগুলোতে বিভ্রান্ত হবার কোনো দরকার নেই।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন বঙ্গবন্ধু ও আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নপূরণের পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন আজকে আবার দেশি ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি এক হওয়ার চেষ্ঠা করছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’
সে কারণেই বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই লবিষ্টের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কয়েকটা বিবৃতি আর কিছু কিছু কংগ্রেসম্যান কিংবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বারের চিঠি ক্রয় করা হয়।’
আগামী নির্বাচন ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান। বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হচ্ছে দেশের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। দেশ পাকিস্তান হবে নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অভিযাত্রায় আরও দ্রুতবেগে এগিয়ে চলবে, সেটির ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন। দেশে কোনো তাবেদারি সরকার, যারা ক্ষমতায় এসে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেবে তারা বসবে, নাকি স্বাধীনচেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার থাকবে- সেটি ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমাগত এ নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা হবে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে নাকি সমুদ্রের একটা অংশ কেউ নিয়ে যাবে, আমাদের কোনো দ্বীপ অন্য কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই নির্বাচনে ফয়সালা হবে দেশে কি হামিদ কারজাই মার্কা তাবেদারি সরকার হবে নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আত্মতুষ্ঠিতে না ভোগার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। দল আজকে সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়। সাড়ে ১৪ বছর আগের চিত্র আর আজকের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরুন। সেই উন্নয়নের চিত্রগুলোই ফেসবুকসহ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। শুধু নিজের ছবি ফেসবুকে দেয়া কর্মী, উদ্ধত আচরণের কর্মীর আমাদের প্রয়োজন নেই; তারা দলের জন্য বোঝা, তাদের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মঈনুদ্দীন, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সসম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।