ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুরের যোগাযোগ ইস্যুতে আরেক দফা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের বক্তব্য বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ, মোসাদের সঙ্গে কাতার, দুবাই ও ভারতে তিন দফা বৈঠক করেছেন নুরুল হক নূর। এ সম্পর্কিত ছবিসহ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে দূতের এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের এজেন্সির ডলার খেয়ে তিনি এমন কথা বলছেন।’
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমি এই তথ্যের সরাসরি সোর্স নই। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি মোসাদের সঙ্গে নূরের তিনটি বৈঠকের কথা জেনেছি।’
নূর যদি মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কী- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তিনি যদি বৈঠক করেও থাকেন, তবে সেটা তার পরিবার, দেশ ও জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। কারণ বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে এবং ইসরায়েলি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।’
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।
এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত একেবারেই উল্টো কথা বলেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘নুরের সঙ্গে কাতার, দুবাই ও ভারতে তিন দফা বৈঠক হয়েছে মোসাদের। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আমরা বৈঠকের ছবি পেয়েছি। কাতার বিশ্বকাপের সময় বিষয়টি আমাদের নজরে আসে।’
ইউসুফ রামাদান আরও বলেন, ‘মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি তিনি (নুর) যদি অস্বীকার করে থাকেন তা ফিলিস্তিনের জন্য ভালো। তবে বিষয়টি সত্য হলে এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
‘ইসরায়েল থেকে টাকা নেয়া মানুষ কখনও নেতা হতে পারে না। এ ধরনের নেতা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
রোহিঙ্গাদের জন্য ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির খাদ্য সহায়তা বিষয়ে অবহিত করতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাস।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের ওই অভিযোগের পর সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির সদ্য সাবেক সদস্যসচিব নুরুল হক নুর।
রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত সরকারের কোনো এজেন্সির ডলার খেয়ে প্ররোচনায় পড়ে এমন একটা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিলেন কি না- এটা আমার সন্দেহ হয়। আমার পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসা নেই।’
সাংবাদিকদের নুর বলেন, ‘এই অভিযোগটি গত ডিসেম্বরেও তুলেছিল আওয়ামী লীগের সাইবার সেল। সে সময় তারা ফেক ছবি, ভিডিও, ভয়েস প্রচার করেছিল। তখনও আমি এই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। এখনও আমি চ্যালেঞ্জ করছি। অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দিতে পারবেন না। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত নিজে সুবিধা নেয়ার জন্য এসব কথা বলছেন।’
এই অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন ও অসত্য দাবি করে নুর বলেন, ‘এ ধরনের কথা এই রাষ্ট্রদূত বলেছেন কি না আমি জানি না।
‘দেশে দীর্ঘদিন ধরে যে রাষ্ট্রদূতরা থাকেন তারা জানেন, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা বললে তারাও অনেকে সুবিধা পান। যে কারণে অনেকেই দেশের রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছেন। এটি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’