আসন্ন ঈদুল আজহায় ৮ ঘন্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সোমবার দুপুরে বনানীর হোটেল শেরাটনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ শিরোনামে ডিএনসিসির কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমি যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি তখন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ হতো ৪৮ ঘন্টার মধ্যে। এর পরের বছর থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসরণ শেষ করতাম ২৪ ঘন্টার মধ্যে। গত কোরবানির ঈদে বর্জ্য অপসারণ করেছি ১২ ঘন্টায়। এবার বলতে চাই, সবার চেষ্টায় এই ঈদে আমরা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব। এটাই এবার আমাদের টার্গেট।’
এসময় কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি নিজেও মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দেন মেয়র।
তিনি বলেন, ‘কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে জড়িত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য তদারকি টিম ও কমিটি গঠন করে দিয়েছি। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে আমাদের ১১ হাজার কর্মী মাঠে থাকবে।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যারা কোরবানি করবেন সেসব নাগরিকদের জন্য ৯ লাখ বায়োডিগ্রেডেবল (পরিবেশবান্ধব) পলিব্যাগ আমরা বিতরণ করব। এই পলিব্যাগে কোরবানির বর্জ্য ঢুকিয়ে আপনারা রেখে দিবেন, সেগুলো আমরা সরিয়ে নেব। তবে অনুরোধ, এসব পলিব্যাগে আপনারা যেন মাংস ঢুকিয়ে ফ্রিজে না রাখেন। এগুলো বর্জ্য অপসারণের জন্য আমরা তৈরি করেছি।’
মেয়র জানান, এর মধ্যেই অস্থায়ী ৮টি কোরবানির পশুর হাটের আয়োজন করেছে ডিএনসিসি। দুই-একদিনের মধ্যে আরও একটি হাট চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ ডিএনসিসির এই নয়টি অস্থায়ী হাট এবং গাবতলী স্থায়ী হাট, এই মোট ১০টি হাটের বাইরে আর কোনো হাট ডিএনসিসি এলাকায় থাকবে না।
এর বাইরে কোথাও যদি রাস্তা দখল করে হাট বসানো হয় তাহলে সেইসব হাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া কোথাও যেন হাট বসতে না পারে।’
ডিএনসিসির স্মার্ট হাট প্রসঙ্গে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসির ৮টি কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন ব্যবস্থা থাকবে। এই হাটগুলোই হবে স্মার্ট হাট। আমরা ধীরে ধীরে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে সব লেনদেন হবে স্মার্টলি। তেমনি কোরবানির পশুর হাটে আমরা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারব। ইতোমধ্যে ১০ হাজার খামারির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এই লেনদেনের জন্য। সেক্ষেত্রে টাকা নিয়ে আমাদের আর হাটে যেতে হবে না; গরুর মালিকরাও টাকা নিয়ে বাড়ির ফেরার সময় সমস্যায় পড়বেন না। কারণ লেনদেন হবে ডিজিটালি।
‘কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন চালুকরণ এবং প্রান্তিক পশু বিক্রেতাদেরকে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগের পাইলট কার্যক্রম গ্রহণ করে, যেখানে ৩৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এবার আমাদের লেনদেন টার্গেট দেড়শ কোটি টাকা।’
ডিএনসিসির আওতাধীন কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে যে ৮টি হাটে ডিজিটাল লেনদেন হবে, এগুলোর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গা, বাড্ডা ইষ্টার্ণ হাউজিং আফতাব নগরস্থিত ব্লক ই, এফ. জি. এইচ. পর্যন্ত (যা সাবেক বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশ), মোহাম্মদপুর বছিলাস্থ ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট, মিরপুর সেকশন ৬, ওয়ার্ড ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গায় বসা হাট।
ডিএনসিসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতাগণকে আর্থিক পরিষেবার আওতায় আনতে এবং সাধারণ ক্রেতাগণের সকল পর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টিতে কোরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন (বিশেষত বাংলা কিউআর) প্রসারের এই কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএনসিসির পশুর হাটে ১০টি ব্যাংক- এবি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (পিএলসি), ৩টি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম (এমেক্স, মাস্টারকার্ড ও ভিসা) এবং ৪টি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ) ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হুসাইন, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন প্রমুখ।