ভারতের গুজরাট উপকূলে ইতোমধ্যে প্রভাব দেখানো শুরু করা ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। আজ (বৃহস্পতিবার) মাঝরাতেই ভারতীয় উপেকূলে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে শুক্রবার দুপুরে তা নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই সময়ের খবরে বলা হয়, আরব সাগরে তৈরি হওয়া এ ঘূর্ণিঝড়টি গুজরাট উপকূলে তা আছড়ে পড়বে, তা আগে থেকেই জানিয়েছিল ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
এই প্রসঙ্গে দপ্তরের পরিচালক ড. মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘পাকিস্তানের করাচি ও মান্ডবি সংলগ্ন এলাকা এবং ভারতের গুজরাটের জাকাও বন্দরের কাছে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়বে। জাকাও বন্দর থেকে ঝড়টি (সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে) ৭০ কিলোমিটার দূরে বর্তমানে অবস্থান করছে। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে তা এগোচ্ছে। সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছর ওপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। মাঝরাত পর্যন্ত ঝড়ের উপকূলে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া চলবে।’
ভারতের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মহাপরিচালক নরেন্দ্র সিং বুন্দেলা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস, শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। ওই সময় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ভারী বৃষ্টির জন্য বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ মোকাবিলায় আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করে গুজরাট প্রশাসন। বুধবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বৈঠকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
উপকূলবর্তী এলাকাগুলো থেকে প্রায় ৭৪ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে গুজরাটের প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সেখানকার সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ভারতের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর ৩৩টি টিমও উপকূলবর্তী জেলাগুলি অবস্থান করছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
গুজরাটের এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন। খাবার পানি, শুকনো খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে এর মধ্যে অনেকটাই শক্তি হারিয়েছে ‘বিপর্যয়’। ফলে বিধ্বংসী রূপে তা আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশ কম বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রাণহানির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে বৃষ্টিপাত হতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘বিপর্যয়’ দিয়েছে বাংলাদেশ।
‘বিপর্যয়’ আরব সাগরে তৈরি হওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ ঘূর্ণিঝড়। ৬ জুন আরব সাগরে তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়টি। এর ৯ দিন পর ১৫ তারিখ তা আছড়ে পড়ছে গুজরাট উপকূলে।
১৯৬৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে জুন মাসে ১৩টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে আরব সাগরে। তার মধ্যে মাত্র দুইটি গুজরাটের উপকূলবর্তী এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।