জ্বালানি সংকটে দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে সারা দেশে তীব্র লোডশেডিং দেখা দেয়। এর মধ্যেও নির্বাচনের আগে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করে খুলনায় লোডশেডিং বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে ভোট যেতেই নগরে আবার ফিরে এসেছে লোডশেডিং।
খুলনাবাসীর অভিযোগ, ‘ভোটে জেতা হয়ে গেছে, তাই এখন আর আমাদের খবর রাখার দরকার নেই তাদের।’
খুলনা শহরের ইকবাল নগর এলাকায় মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোট তিনবার লোডশেডিং হয়েছে। এর মধ্যে লোডশেডিং ছিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা, দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা ও ২টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত।
ওই এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল বলেন, ‘ভোটের আগের কয়েকদিন বেশ ভালোই কেটেছিল। শহরে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে ভোটের পরের দিন আবার লোডশেডিং শুরু হলো। আমাদের ভোট নেয়া হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের বিজয় হয়েছে, এখন আর আমাদের খবর রাখার দরকার নেই তাদের। তাই লোডশেডিং দেয়া শুরু করেছে।’
শহরের নিরালা এলাকায় সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। আহসান আহমেদ রোড এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪ বার লোডশেডিং হয়েছে, যার প্রত্যেকটির ব্যাপ্তি ছিল আধা ঘন্টার ওপরে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), খুলনার সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘ভোটের আগে লোডশেডিং ছিল না, এখন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি এখানে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তারা যা করেছে, তা ভোটারদের সাথে প্রতারণার শামিল।’
জ্বালানি সংকটে সরকার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না করতে পারায় সারা দেশে কম-বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল লোডশেডিং বন্ধ করতে। লোডশেডিংয়ে ভোট কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। দলীয় নেতার বাক্সে ভোট বাড়াতে সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ। তাতে কাজও হয়েছিল; অনুরোধের পর লোডশেডিংয়ের তীব্রতা কমে যায়।
সোমবারের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ করে তৃতীয়বারের মতো খুলনার নগরপিতা হয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক। তবে ভোটের পরেরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই খুলনা শহরে দেখা যাচ্ছে আগের মতো লোডশেডিং।
খুলনা শহরে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।
ওজোপাডিকো-র কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, ২ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত খুলনা শহরের কোন লোডশেডিং ছিল না। ১৩ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ১০ থেকে শহরে আবার লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
তারা জানায়, মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে খুলনা শহরে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১২৯ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৩১ মেগাওয়াট।
খুলনা শহরের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা শহরে, ৩৭টি পৌরসভা, দুটি সিটি কর্পোরেশন ও ২১টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওজোপাডিকো।
দুপুর ২টার দিকে তাদের আওয়াতধীন সম্পূর্ণ এলাকায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৭১ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৬০৬ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৬৫ মেগাওয়াট, যার প্রায় অর্ধেকই ছিল খুলনা শহরে।
ওজোপাডিকো-র প্রধান প্রকৌশলী আবু হাসান বলেন, ‘চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় কয়েকটি এলাকায় লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।’
এদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপদন হয়েছে ১২ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে সারাদেশে লোডশেডিং ছিল ৭৮৩ মেগাওয়াট।