গাজীপুর সিটিতে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ ঘরানার বরখাস্তকৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফলের পর বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও ছিল তেমনই উত্তেজনা।
এ দুই সিটিতেও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে অন্যান্য প্রার্থীরা টক্কর দিতে পারবেন কি না, তা দেখতে উৎসুক ছিল দেশের সব সচেতন নাগরিক। কিন্তু তাদের সমস্ত উত্তেজনার আগুনে জল ঢেলে দিয়ে দুই সিটিতেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থী। শুধু তাই নয়, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাদের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারেননি অন্যরা।
বরিশাল সিটির নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। নির্বাচনে ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাথা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম। তিনি পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। বাকিরা তো আরও দূরে। জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন পেয়েছেন ৮ হাজার ভোটের একটি কম, হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ ভোট এবং হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান পেয়েছেন মাত্র ৫২৯ ভোট।
নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ১২৬টি কেন্দ্রের এবার ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার ৭৫৬ ভোটার। সে হিসেবে ভোট পড়েছে মোট ভোটারের ৫১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
অন্যদিকে খুলনাবাসী তৃতীয়বারের মতো মেয়র হিসেবে আস্থা রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের ওপর। নির্বাচনে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
খুলনা সিটিতেও নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। এ সিটিতে হাতপাখা প্রতীকের মো. আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। বাকিদের অবস্থাও আরও করুণ। জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে মো. শফিকুল ইসলাম মধু পেয়েছেন মাত্র ১৮ হাজার ০৭ ভোট। তাছাড়া জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীকে এস এম সাব্বির হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে এস এম শফিকুর রহমান পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট।
খুলনা সিটিতে এবার মোট ভোটারসংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯। ভোট পড়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৩টি; অর্থাৎ মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট দিয়েছেন।
বরিশালে এবার ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ১০টি পদের বিপরীতে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ১২৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়।
অন্যদিকে ৫ মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নগরীর ২৮৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়।
সোমবার সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে তা চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দুই সিটির নির্বাচনই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।