বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খুলনায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীদের

  • প্রতিনিধি, খুলনা   
  • ১১ জুন, ২০২৩ ১৬:০২

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নেই। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কালো টাকা ছড়াচ্ছেন।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে সোমবার সকাল আটটায়। এর আগে শনিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল শহরজুড়ে টহল দেয়া শুরু করেছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

রোববার শহরের একাধিক স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের করা হচ্ছে তল্লাশি। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যানবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি মহানগর এলাকায় বহিরাগতদের না থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

এতসব নিরাপত্তার মধ্যেও কেসিসি নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো প্রস্তুতিতে ঘাটতি দেখছি না। তাই নিরপেক্ষ ভোট হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও মাদকমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলা হবে। গত পাঁচ বছরে আমি প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ শেষ করেছি।

‘এখনও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। খুলনাবাসীর কাছে আবেদন জানাই, ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এই উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দিন।’

অন্যদিকে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু।

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এ দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নেই। নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কালো টাকা ছড়াচ্ছেন।

‘এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। প্রশাসন এখনও সরকারের আওতায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সরকারের বাহিরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাদের ইচ্ছা থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।’

মধু আরও বলেন, ‘খুলনায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। ভোট সুষ্ঠু হবে না। ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারলে ভোটের পার্সেন্টেজ কমে যাবে।

‘আমরা নির্বাচনমুখী একটি দল। সরকার কতদূর খেলা করতে পারে, আমরা সেই পর্যন্ত দেখব। জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, তাহলে লাঙ্গলের বিজয় হবে।’

ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘২০১৮ সালের কেসিসি নির্বাচনে নানা রকমের অনিয়ম ঘটেছে। এবারের নির্বাচনেও যে হবে না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে শিল্পনগরী খুলনার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য মহানগর গড়ে তুলব। সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে নাগরিকদের মাঝে ন্যায্য সেবার ব্যবস্থা করব।’

জাকের পার্টি মনোনীত এসএম সাব্বির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকে ক্ষমতাসীনদের একটি প্রভাব রয়েছে। ভোটের দিনেও তারা সেই প্রভাব খাটাতে পারে।’

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে, তবে ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দল কী করবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তারা যদি জোর-জবরদস্তি, হুমকি-ধমকি দেয়, তবে খুলনার জনগণ সেটা মেনে নেবে না। জনগণ রাজপথে নেমে আন্দোলন করবে এবং এটাই হবে সরকার পতনের আন্দোলন।’

নির্বাচনে কোনো দল বাড়তি প্রভাব খাটাতে পারবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য একাধিক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গ্রহণ করা হয়েছে।’

‘মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে

এবার খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কাউন্সিলর পদে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, কিন্তু বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণ না করায় ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, যে কারণে নগরীর সাধারণ ৩১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত ১০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন ৯টিতে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এই নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক নয়। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের বিপরীতে কারও সাথে লড়াই হচ্ছে না, তবে কাউন্সিলর পদে একই দলের অনেক প্রার্থী থাকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

কেসিসি নির্বাচনের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯ ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষ থাকবে। ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ২ হাজার ৩১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।

ফল ঘোষণায় বিলম্ব ঠেকানোর পদক্ষেপ

খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল ঘোষণায় গাজীপুরের মতো যাতে বিড়ম্বনা না হয়, সে জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, নির্বাচনী কাজে ২৮৯ প্রিসাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৭৩২ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৩ হাজার ৪৬৪ পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে দুটি গাড়ি দেয়া হবে, যাতে ভোটগ্রহণ শেষ হলে একটি গাড়ি নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার সরাসরি খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভবনে চলে আসতে পারেন। সেখানে ভোটের ফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং অফিসার। অন্য গাড়িটিতে ভোট কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে জমা দেবেন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা।

রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘গাজীপুরে আগে মালামাল জমা দিয়ে, পরে ভোটের ফলাফল নিয়ে এসেছিল প্রিসাইডিং অফিসাররা। তাই সেখানে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হয়ে যায়, তবে খুলনাতে এমনটি হবে না। তার জন্য নানা রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করছি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।’

এ বিভাগের আরো খবর