তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি তাদের কোনো সমর্থন নেই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটিই তারা চায়। যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে বা নির্বাচন প্রতিহত করবে তাদের বিরুদ্ধে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। কিন্তু এরপরও বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি।
বুধবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস এই আলোচনার আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সরকার সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল তাতে অংশগ্রহণ করুক। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণ আগামীর সরকার নির্বাচিত করুক।’
বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিচারের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকা নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। মামলা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের। সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছিল। তারা হাইকোর্টে গিয়েছিলেন, হাইকোর্ট সেই রায় বহাল রেখেছে।
‘আবার গয়েশ্বর বাবুসহ আরও অনেকে গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ ও জনতার ওপর হামলা পরিচালনা করা সত্ত্বেও তারা আগাম জামিন পেয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয় আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে। এর চেয়ে আর বড় প্রমাণ তো দরকার নেই।’
গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সত্যতা পেয়েছে বিধায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
‘শ্রমিক-কর্মচারীদের যে লভ্যাংশ দেয়ার কথা তা না দিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা শ্রমিক-কর্মচারী নেতাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে ঘুষ হিসেবে। সে জন্য মামলায় তার সঙ্গে নেতারাও আসইম হয়েছেন। এখানে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে। দুদক সেটিই বলছে এবং সে জন্য মামলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ড. ইনূস রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে বুঝতে পেরেছেন যে মানুষের কাছ থেকে যারা যোজন যোজন দূরে থাকেন তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল করা সহজ নয়। রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের কাতারে নামতে হয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। যারা তা করতে পারে না, তাদের পক্ষে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তারা কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু রাজনীতিবিদ বা গণমানুষের নেতা হওয়া তাদের পক্ষে কখনও সম্ভবপর নয়।’
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের এবারের প্রতিপাদ্য ‘উই নিড ফুড, নট টোব্যাকো’। সে অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয় খাদ্য ফলান’।
আলোচনা সভায় বিষয়টির উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তামাকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি সারা জীবন একটিও সিগারেট বা তামাক গ্রহণ করিনি। পৃথিবীতে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ আছে। মাদক চাষের চেয়ে তাদের জন্য খাদ্য ফলানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাদক চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি যদি খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়বে। তাতে দেশ, জাতি, সমাজ, বিশ্ব উপকৃত হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী মোহম্মদ নূরুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।