খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে এক নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এস এম আজিজুর রহমান। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে তার স্ত্রীর কোনো ধরনের আয় নেই। তবে তার স্ত্রীর কাছে বর্তমানে নগদ রয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা আছে এক লাখ ১৩ হাজার ৬৫০ টাকা, কোম্পানির শেয়ার আছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী আছে ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র আছে ৩০ হাজার টাকার এবং স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ১০ ভরি। স্বামীর সম্পদের অংশ থেকে স্ত্রী এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।
একই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান খান খোকন। তার স্ত্রীরও কোনো আয় নেই। তবে তিনি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮২ টাকা, প্রাইভেট কার ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক।
একইভাবে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এস এম মনিরুজ্জামনের স্ত্রী ৩১ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৭ টাকাসহ ৩০ ভরি স্বর্ণের মালিক।
অন্যদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম রব্বানীর স্ত্রী ১০ লাখ টাকা ও ৪০ তোলা স্বর্ণ, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতনের স্ত্রী ৫০ হাজার টাকা, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ সুলতান মাহমুদের স্ত্রী ২৪ লাখ ৩৫ হাজার, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সাহিদুর রহমানের স্ত্রী ৪২ লাখ ৮৫ হাজার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী সরয়ার-উল-আযমের স্ত্রী ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ও ১৫ ভরি স্বর্ণ, ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শরিফুল ইসলামের স্ত্রী ৬ লাখ টাকার মালিক।
হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক প্রার্থীর স্ত্রীর এমনিভাবে কোনো আয় না থাকা সত্ত্বেও তারা স্বামীর সুবাদে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বেশিরভাগ প্রার্থীই ব্যবসায়ী
নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৫ প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৮৬ জন ব্যবসায়ী, ৩৩ জন ঠিকাদার। ব্যবসা ও ঠিকাদারির বাইরে ১৬ জন গৃহিণী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে ৬ আইনজীবী, ৫ চাকরিজীবী, ৫ শিক্ষক, ২ সাংবাদিক, ২ শ্রমিক ও একজন দন্ত্য চিকিৎসক রয়েছেন।
এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য চাষকে পেশা দেখিয়েছেন ১০ জন। পেশার ঘরে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করেছেন পাঁচজন।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের জেলা সম্পাদক আইনজীবী কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকরাই নিজেদের ব্যবসায়ী, কৃষি ও মৎস্যচাষী হিসেবে পরিচয় দেন। ফলে নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আসে। এ জন্য হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা লিখলেও কী ধরনের ব্যবসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোথায় তা বিস্তারিত উল্লেখ করা উচিত। তাহলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিপুল অর্থ ব্যয়ের অপসংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় শিক্ষকসহ সৃজনশীল মানুষ নির্বাচনে আসতে চান না। এ কারণে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। সৃজনশীল পেশার মানুষকে নির্বাচনে আসতে উৎসাহিত করা উচিত।’
মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হননি অধিকাংশ প্রার্থী
হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীর ৮৬ জনই মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারেননি। এদের মধ্যে আবার ৫ জন নিজেদের অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, ১১ জন স্বশিক্ষিত এবং ৯ জন স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদের মধ্যে ৩০ জন অষ্টম শ্রেণি, দু’জন পঞ্চম এবং দু’জন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এসএসসি বা মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন ২৭ জন। আর ৩৫ জন স্নাতক উত্তীর্ণ এবং ১৪ জন স্নাতকোত্তর
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, নগর পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণে জড়িত কাউন্সিলরদের ন্যূনতম একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। এতে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়, সংযোগ স্থাপন এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে সহজ হয়।
মামলা ৩৬ প্রার্থীর নামে
হলফনামার তথ্যে দেখা গেছে, কেসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৩৬ জনের নামে মামলা রয়েছে ১৬৪টি। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ১১ নেতার বিরুদ্ধেই আছে ১২০টি। এসব মামলার অধিকাংশই বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা। এ ছাড়া ২৬ জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল ৬২টি। তারা কেউ চার্জশিট থেকে অব্যাহতি, কেউ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২৫টি। আগে খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন তিনটিতে।
অপর জামায়াত নেতা ১ নম্বর ওয়ার্ডের এস এম আজিজুর রহমান স্বপনের বিরুদ্ধে ১৪টি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার মো. শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ১৩টি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে চারটি এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরুল ইসলাম পান্নার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতনের বিরুদ্ধে ১২টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শামসুল আলম মিল্টনের বিরুদ্ধে ১২টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী ফজলুল কবীর টিটোর বিরুদ্ধে ১৫টি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান কাকনের বিরুদ্ধে দুটি এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মাহবুব কায়সারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো বিচারাধীন।