অটোরিকশা বা ইজিবাইকের নগরী এখন কুমিল্লা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অটোরিকশার কারনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীজুড়ে যানজট লেগেই থাকে। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা, ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেপোরোয়া গতির কারনে নিত্যদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। বাড়ছে পঙ্গুত্ব।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মতে, নগরীর প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে চলাচলের উপযুক্ত ৫ হাজার ইজিবাইক। সেখানে এখন প্রায় ৪৫ হাজার অটোরিকশা সড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। শুধু তাই নয়, বেপোরোয়া অটোরিকশা চালকদের কারনে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে।
কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শোয়েব সোহেল জানান, সম্প্রতি তিনি মোটরবাইকে করে কান্দিরপাড় হয়ে পদুয়ার বাজার যাচ্ছিলেন। পথে নগরীর শাকতলা এলাকায় একটি অটোরিকশা তাকে বহনকারী মোটরবাইকটিকে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পরে গুরুতর আহত হন। আহমেদ শোয়েব সোহেল বলেন, এই নগরীতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অটোরিকশা চলে। চালকরা জানেন না নিয়ম নীতি। এখন যদি এই অটোরিকশাগুলোকে শৃংখলায় না আনা যায়, তাহলে সামনের দিনগুলো আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
গণমাধ্যমকর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, জরুরী কাজে তিনি কুমিল্লা নগরীর সার্কিট হাউজ দিয়ে যাওয়ার সময় অটোরিকশার সংঘর্ষে তার পা ভেঙে যায়। ছয়মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি কিছুটা সুস্থ হন। তবে এখনো তার পা ব্যাথা করে।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কানাই দত্ত জানান, অটোরিকশার ধাক্কায় তার পায়ের আঙুল কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নগরীর ফৌজদারী এলাকায় দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে পা ভাঙলো গৃহবধু রোকসানা আক্তার। স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তিনমাসের জন্য হাটাচলা বন্ধ করে চিকিৎসা নিতে বলেছেন। নিত্যদিন দুর্ঘটনার কারনে অটোরিকশা এখন নগরবাসীর কাছে রীতিমতো আতংকের হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর প্রধান সড়কের মধ্যে শাসনগাছা, কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজারে সড়কের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এতে করে প্রতিনিয়ত যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। অটোরিকশা বন্ধে আমদানি নিষিদ্ধ হলেও টমসমব্রীজ থেকে জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত বেশকিছু দোকানে তৈরী করা অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে।
নগরীর ব্যস্ততম সড়কে অটোরিকশা কেন এত বেপোরোয়া এই বিষয়ে এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, অটোরিকশা চালকদের মধ্যে নেশা করার প্রবনতা আছে। নাম পরিচয় গোপন রেখে বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালক জানান, নেশার ঘোরের মধ্যে থাকার কারনে গতি তাদের কাছে ভালো লাগে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নগরীর একশজন অটো রিকশা চালকের মধ্যে অন্তত ৩০ জন চালক নেশা করে অটোরিকশা চালায়। যার কারনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত ২০১২ সালে। এক যুগের বেশী সময়ে অন্তত ৩ জন মেয়র সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাদের মধ্যে কেউ নগরীর সড়কের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পারেন নি।
নগরীর সড়কে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, ছয় হাজার অটোরিকশাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। গ্রাম থেকে আসা অটোরিকশাগুলোকে শহরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এছাড়াও কিউআর কোড বসানো হবে। নিবন্ধনের বাইরে কোন অটোরিকশা নগরীতে চলতে পারবে না। সে জন্য অভিযান পরিচালনাও করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার জানান, নগরীর সড়কগুলোতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনাসহ অবৈধ অটোরিকশা চলাচল বন্ধে জেলা প্রশাসন আগেও সিটি কর্পোরেশনকে সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগীতা করেছে, এখনো করবে।